মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অবৈধভাবে পরিচালক বসিয়ে টাকা পাচারে ব্যস্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধভাবে পরিচালক বসিয়ে টাকা পাচারে ব্যস্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক

অবৈধভাবে পরিচালক বসিয়ে টাকা পাচার করছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাইওয়ানের এক নাগরিককে পরিচালক বানিয়ে অভিনব পন্থায় অর্থ পাচার করছে ব্যাংকটি। পাচার করা টাকা উদ্ধার করতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে কয়েক দফা শোকজও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়মবহিভর্‚তভাবে এলসি খুলে চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়ী গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি এ ব্যাংকটির মালিকানায় রয়েছেন। তারাই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পরিচালক নিয়োগ করেছেন। দুটি পরিবারের বাইরে তাইওয়ানের নাগরিক ইয়ে চেঙ মিনকে পরিচালক হিসেবে বসানো হয়েছে। ইয়ে চেঙ মিনের মালয়েশিয়ায় ব্যবসা রয়েছে। তিনি মালয়েশিয়ান পাসপোর্টধারীও। কোনো ঘোষণা ছাড়া স্থানীয় বিনিয়োগ দেখিয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকে তাকে পরিচালক হিসেবে বসানো হয়েছে, যা রীতিমতো ব্যাংকিং বিধি ভঙ্গের শামিল। প্রিমিয়ার ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইয়ে চেঙ মিন তাইওয়ানের নাগরিক হলেও মালয়েশিয়ায় তার একটি সাইকেল তৈরির কারখানা রয়েছে। ওই দেশের সাইকেল উৎপাদক কোম্পানি আলিটা লিমিটেডের চেয়ারম্যান তিনি। মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত বাইসাইকেল বাজারজাত করতে তিনি বাংলাদেশে অন্য একটি কোম্পানি স্থাপন করেছেন। নিজের কোম্পানির সাইকেল বাংলাদেশে আমদানি করে বিক্রিও করছেন তিনি। ওই কোম্পানি থেকে সাইকেল আমদানি করার পুরো এলসি প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে খোলা হয়। এই এলসির মাধ্যমে দেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ সাইকেল আমদানি দেখানো হয়। সাইকেল আমদানির মাধ্যমে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার এলসি-বাণিজ্য করেই বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয় বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাইকেল তৈরির বিভিন্ন পণ্য আমদানির ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবে কী আমদানি করা হয়, এর প্রকৃত কোনো তথ্য কারও কাছে নেই। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত তথ্য চাইলে প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ওই কোম্পানিটি তা সরবরাহ করেনি। দীর্ঘদিন প্রিমিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে বাণিজ্য করায় এখন ইয়ে চেঙ মিনকেই পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং আইন অনুসারে স্থানীয় নাগরিক না হলে বিদেশি বিনিয়োগ কোটায় কোনো বিদেশিকে পরিচালক নিয়োগ করা যায়। কিন্তু প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রতিবেদনে বিদেশি বিনিয়োগের কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। অর্থাৎ স্থানীয় নাগরিক হিসেবেই পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে তাইওয়ানি নাগরিক ইয়ে চেঙ মিনকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে দেখা গেছে, ২০১১ সালে বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন। এ টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। আর পুরো এলসির বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মালয়েশিয়ার ওই ব্যবসায়ী। বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, তার স্ত্রী এবং ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরিন হাসিবসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের অনেকে এখন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে পাচার করা টাকা উদ্ধার করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এলসি-সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব নির্দেশনার কিছুই না মেনে ব্যাংক তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইয়ে চেঙ মিনকে কীভাবে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা জানা নেই। ব্যাংকে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ নেই তাও তিনি স্বীকার করেন। এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার ফজলে রশিদকে কয়েকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

সর্বশেষ খবর