বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্বেগ লাগামহীন দুর্নীতি যমুনা ব্যাংকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংকে লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ জালিয়াতি, শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, এলসি জালিয়াতি, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে মোটা অঙ্কের ঋণ অনুমোদন ও বেপরোয়া বিনিয়োগ- এসব বিষয়ে ব্যাংকটিকে ইতিমধ্যে কয়েক দফা সতর্কও করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকটির অনিয়ম-দুর্নীতি যেন কিছুতেই থামছে না। যমুনা ব্যাংকের সার্বিক শৃঙ্খলা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর প্রকাশিত এক সুপারভিশন প্রতিবেদনে এ উদ্বেগের কথা গভর্নরকে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারি বিসমিল্লাহ গ্রুপের জালিয়াতি। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার জালিয়াতিতে ফেঁসে যাচ্ছে যমুনা ব্যাংক। তবে এই গ্রুপের কর্ণধাররা দেশে-বিদেশে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। একদিকে যমুনা ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেওয়া ১৬৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বিসমিল্লাহ গ্রুপের কাছ থেকে তুলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ব্যাংকটিতে দেখা দিয়েছে গ্রাহকদের আস্থার সংকট। প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক আমানত তুলে নিচ্ছেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় দুই বছর আগে যমুনা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ১০৬ কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ায় এ নিয়েও ব্যাংক খাতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নড়েচড়ে বসেছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে ব্যাংকটির দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানও অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি শাখায় খোলা ১৩টি এলসির বিষয়ে নতুন করে অনুসন্ধান করেছে দুদক। এর মধ্যে দুটি এলসির টাকা প্রায় দেড় বছর পর পরিশোধ করা হলেও বাকি ১১টির বিপরীতে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ২২ হাজার ২৪৮ টাকা ব্যাংকটির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা যায়। অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোট ৮ কোটি টাকা মূল্যের এলসির টাকা জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, বিসমিল্লাহ গ্রুপকে দেড় হাজার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ দিতে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে যমুনা ব্যাংক। এই ব্যাংকটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তা এমনকি একজন প্রভাবশালী পরিচালকও এর সঙ্গে জড়িত বলে মনে করে দুদক। বিসমিল্লাহ গ্রুপের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে পরিচালনা পর্ষদকে ঋণ অনুমোদনে তিনি প্রভাবিত করেছেন। পাশাপাশি অন্য আরও চারটি ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালককে ম্যানেজ করে ওই সব ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপকে ঋণ পাইয়ে দিয়েও সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া অর্থের বিনিময়ে ভুয়া ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বাধ্য করেছেন বলে সন্দেহ দুদকের। কিন্তু ওই পরিচালক রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে সরাসরি নোটিস করতে পারছে না কমিশন। ফলে এই জালিয়াতিতে অভিযুক্ত যমুনা ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে আরও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর