বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে সেই পরিমলের যাবজ্জীবন

আদালত প্রতিবেদক

ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে সেই পরিমলের যাবজ্জীবন

ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের সাবেক শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমদ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে আসামি পরিমল জয়ধরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর তাকে পুলিশ পাহারায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকরা রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পরিমল বলেন, ‘আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। মহামান্য বিচারক যে রায় দিয়েছেন সে ব্যাপারে আমি আর কী বলতে পারি? আমি নির্দোষ। আমার আর কিছুই বলার নাই।’ পরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন পরিমল। তবে পরিমলের আইনজীবী মাহফুজ মিয়া জানান, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফোরকান মিয়া জানান, এ রায়ে আসামি পরিমলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ডের টাকা মামলার ভিকটিমকে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ কারণে রায়ের আদেশে ঢাকা জেলার কালেক্টরকে অর্থদণ্ডের টাকা আদায়পূর্বক আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে জমা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পুলিশের পরিদর্শক এস এস শাহাদাৎ হোসেন এবং পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবে খোদা। বিশেষ করে পরিদর্শক শাহাদাৎ এ মামলার তদন্তে চরম অদক্ষতা ও গাফিলতি দেখিয়েছেন। পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন সিনিয়র কর্মকর্তার এ ধরনের গাফিলতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা সঠিকভাবে তদন্ত করলে, বিচারপ্রার্থীর অভিযোগ সমর্থনের জন্য তা অধিকতর সহায়ক হতো। তবে, তাদের তদন্তের দুর্বলতার কারণে এ মামলার যে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি, তা বলা যায় না। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপিত মৌখিক, দালিলিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই আসামি পরিমলকে ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৮ মে ওই ছাত্রীকে হাত বেঁধে, মুখে ওড়না গুঁজে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন পরিমল। এ সময় ওই ছাত্রীর নগ্ন ছবি মোবাইলে ভিডিও করা হয়। ওই ভিডিও বাজারে ছাড়ার কথা বলে ওই বছরের ১৭ জুন ফের ধর্ষণ করেন পরিমল। পরে ছাত্রীর বাবা একই বছরের ৫ জুলাই বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার আসামি করা হয় পরিমল জয়ধর, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা ও প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমানকে। এর দুই দিন পর (৭ জুলাই) পরিমলের স্ত্রীর বড় বোনের বাসা কেরানীগঞ্জ থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর রিমান্ডে নেওয়া হলে ২০১১ সালের ৭ জুলাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন পরিমল। পরে তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা ও প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমানকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। পরে এ দুজনকে অব্যাহতি দিয়ে ২০১২ সালের ৭ মার্চ আসামি পরিমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এতে ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর