বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চিন্তা এখন ভোট নিয়ে

আওয়ামী লীগে মেয়র মনোনয়ন কেন্দ্র থেকে

রফিকুল ইসলাম রনি

চিন্তা এখন ভোট নিয়ে

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, পুত্র, ভাই, শ্যালকসহ আত্মীয়স্বজনকে মনোনয়ন না দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের প্রাধান্য দেবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে মেয়র মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। আজ সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের যৌথসভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় দলের গঠনতন্ত্রে সংশ্লিষ্ট কিছু ধারা-উপধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আজকের বৈঠকে কেন্দ্রীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচন পরিচলানা সেল গঠন, দলের জাতীয় কাউন্সিল, সাংগঠনিক অবস্থাসহ দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।  দলীয় সূত্র মতে, প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূলে নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চান ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য প্রতিটি  পৌরসভায় একক মেয়র প্রার্থী নিশ্চিত করাই দলের নীতি-নির্ধারকদের প্রথম লক্ষ্য। জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময়ই তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষরযুক্ত আগাম মনোনয়ন প্রত্যাহারপত্র জমা নিয়ে রাখা হতে পারে। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের একক কাউন্সিলর প্রার্থী নিশ্চিত করতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে বলে জানান ওই সব নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত নেতাদের একজন। সূত্র মতে, অনেক স্থানে মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের পারিবারিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার কিংবা সৃষ্টির উদ্দেশে পৌরসভাগুলোয় মেয়র পদে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তারা যেন প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রী, পুত্র, শ্যালক, ভগ্নিপতিসহ আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী করতে না পারেন সে জন্য তীক্ষè দৃষ্টি রাখা হবে প্রার্থী মনোনয়নে। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, স্থানীয় এমপি ও তৃণমূল নেতারাই সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করবেন। তাদের প্রতিটি পৌরসভায় ক্রমানুসারে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তালিকার শীর্ষে মূল প্রার্থীর পাশাপাশি বিকল্প একাধিক প্রার্থীর নাম রাখতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনানুযায়ী তৈরি করা এ তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মিলিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। যেসব পৌরসভায় বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র রয়েছেন, দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে মোটামুটি তাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী বলেন, এ নির্বাচনে আমরা মেয়র পদে সর্বোচ্চ সংখ্যক দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য প্রতিটি পৌরসভায় একক মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রার্থী মনোনয়নে জটিলতা এড়াতে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে  ঐক্যবদ্ধ রাখতে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন ও ঘোষণার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এমপি-মন্ত্রীদের স্ত্রী, পুত্র, ভাই, শ্যালক, নিকটাত্মীয় হলেই যে দলের মনোনয়ন পাবেন এটা ভাবা ঠিক নয়। যারা দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত, এলাকার জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন ব্যক্তিই দলীয় মনোনয়ন লাভে অগ্রাধিকার পাবেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, দলীয় এমপি ও স্থানীয় নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে মেয়র প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা করা হবে। পরে সেটা যাচাই-বাছাই করে জনপ্রিয় ব্যক্তিকেই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যে পৌরসভায় দলীয় মেয়র বর্তমান আছেন, তার গ্রহণযোগ্যতা থাকলে তাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। নতুনদের ক্ষেত্রে সিভি নেব, যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, উত্তরাধিকার নয়, স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যদেরই দলীয় মনোনয়নে প্রাধান্য দেওয়া হবে। প্রথমবারের মতো দলীয় নৌকা প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করে প্রমাণ করতে চাই, দেশবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নে আস্থাশীল। সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। আমার ধারণা, আজকের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের গঠনতন্ত্রের কিছু ধারা-উপধারায় সংশোধনী আনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে দলের আগামী জাতীয় কাউন্সিলে সংশোধীত ধারা-উপধারাগুলো অনুমোদন করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর