বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রার্থী মনোনয়নে দলের সময় এক সপ্তাহ

৪০ রাজনৈতিক সংগঠনকে ইসির চিঠি

গোলাম রাব্বানী

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয়ভাবে মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য মাত্র সাত-আট দিন সময় পাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এবারে মনোনয়নপত্র জমার আগেই দলকে একজন প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে। এতে দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হওয়ার পথ খুলে গেল বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারা। তবে আগামী শনিবারের মধ্যে মনোনয়ন দিতে দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে হবে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

অন্যদিকে জাতীয় সংসদে দলের পক্ষে একাধিক ব্যক্তির মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও পৌর নির্বাচনে তা থাকছে না। এ ক্ষেত্রে দলের পক্ষ থেকে মাত্র একজনই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্ভয়ে থাকলেও বিএনপি শঙ্কা প্রকাশ করছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি জোটের নেতারা মনে করছেন, একমাত্র প্রার্থী বাছাইয়ে ঝরে পড়লে বা বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠে থাকবে না। নির্বাচন কমিশনের এমন বিধানেরও সমালোচনা করছেন তারা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন বাণিজ্য কমবে। এতে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। মঙ্গলবার পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, পৌর মেয়র পদে রাজনৈতিক দল একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবে না। একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। তিনি জানান, দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক/ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরে দল মনোনীত প্রার্থীর প্রত্যয়ন থাকতে হবে। তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিনের মধ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি ও নমুনা স্বাক্ষর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে ইসির যুগ্ম-সচিব জেসমিন টুলী জানান, নতুন নির্বাচনবিধি ও আচরণবিধির বিষয়টি উল্লেখ করে শনিবারের মধ্যে মেয়র পদে দলের মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ইসিতে পাঠাতে নিবন্ধিত ৪০টি দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংসদে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারলেও নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন না পৌর মেয়র পদে। এ কর্মকর্তা জানান, দল শনিবারের মধ্যে ইসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির তালিকা দেবে। তবে প্রার্থী ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে উপযুক্ত ব্যক্তির প্রত্যয়নসহ মনোনয়নপত্র জমা দিলে চলবে। এ সময়ের মধ্যেই দলকে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে হবে। সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত অন্তত তিনজনের প্যানেল দেওয়া যেত। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারতেন। বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থিতার পর প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত চূড়ান্ত দল মনোনয়নের সুযোগ ছিল। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত দলীয় প্রার্থিতার তালিকা যেমন ইসিকে দেওয়া হতো, তেমনি জোটগতভাবে মনোনীত প্রার্থীর নাম ও প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ ছিল। পৌর নির্বাচনের এমন বিধান না রাখায় কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের আশ্বাস পেলে তার দল স্থানীয় নির্বাচনে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, সংসদে তো একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন দিতে পারত, তখন বাছাইয়ে অন্তত একজন টিকে থাকলে দলের হয়ে লড়তে পারত। কিন্তু পৌর নির্বাচনে একজনই মনোনয়নপত্র দিতে পারলে ভোটে থাকার শঙ্কা বেড়ে গেল। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তো একজনই মনোনয়ন পাবেন। সংসদের মতো না হলেও পৌর নির্বাচনে আগেই তা চূড়ান্ত করতে হবে আমাদের। এটা আরও ভালো হয়েছে বলে মনে করি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন বাণিজ্য কমবে। এতে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গিয়ে সর্বশেষ দশম সংসদে নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও ‘ঝামেলায়’ পড়তে হয়েছে বলে জানান তারা। পৌর নির্বাচনে দল যোগ্য ব্যক্তিকে যেন মনোনয়ন দেয়, বাছাইয়ে ঝরে যাবে এমন ঋণখেলাপি বা অভিযুক্ত কাউকে মনোনয়ন না দেয়- নতুন বিধান তাতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি তিনজনকে মনোনয়ন দেওয়ার নামে বাণিজ্য করার সুযোগও থাকবে না বলে মত দেন উপসচিব পর্যায়ের এক ইসি কর্মকর্তা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর বাছাই এবং ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়। ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হবে। স্থানীয় সরকারে প্রথমবারের মতো পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয়ভাবে ভোট হচ্ছে। দলীয় মনোনয়নের বাইরে ১০০ ভোটারের সমর্থনসূচক ব্যক্তির তালিকা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন আগ্রহীরা। সাবেক মেয়রদের স্বতন্ত্র মেয়র পদে দাঁড়াতে সমর্থন তালিকার দরকার নেই। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে ভোট হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রথমবার স্থানীয়ভাবে দলীয় ভোট করতে গিয়ে বিধিবিধান প্রয়োগে কিছু ঝামেলা থাকবে। তা বিশ্লেষণ করে পরে সামঞ্জস্যও করা যাবে। এ অভিজ্ঞতা সামনের সব স্থানীয় নির্বাচনে কাজে লাগাবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

সর্বশেষ খবর