শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভোট মাঠে লড়াই ঢাকায়

শাবান মাহমুদ ও মাহমুদ আজহার

৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচন সামনে রেখে শুরু হয়েছে মনোনয়ন লড়াই। ভোট মাঠের হলেও মনোনয়নযুদ্ধ চলছে ঢাকায়। প্রধান দুই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে ঘাম ঝরছে দুই দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতীক পেতে মরিয়া মন্ত্রী-এমপির ভাই, স্ত্রী, শ্যালকসহ নিকটাত্মীয়রা। অন্যদিকে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা নিজেদের পছন্দের নেতাদের মনোনয়ন দিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। প্রধান দুই দলের কোন নেতা ‘ক্ষমতাপ্রাপ্ত’ হয়ে মনোনয়নপত্রে সই করবেন, তা নিয়েও প্রার্থীদের উৎসাহের শেষ নেই। সেদিকেও এখন চোখ প্রার্থীদের।মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করতে গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দিনভর ব্যস্ত ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও। একই ইস্যুতে বুধবার রাতে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর গতকাল রাতে ২০-দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। গুলশান কার্যালয়ে প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা দিনভর ব্যস্ত ছিলেন। রাতে খালেদা জিয়ার কাছে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা তুলে দেন। মনোনয়নপত্রে সই করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত নেতাও চূড়ান্ত করা হয়।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের আইনগত দায়িত্ব থাকলেও সহযোগিতা করতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে কে রিটার্নিং অফিসার থাকল না থাকল তা মুখ্য নয়। সব পক্ষকেই নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকতে হবে। প্রার্থী বাছাইয়ে এখন সরাসরি ভূমিকা পালন করবে রাজনৈতিক দলগুলো। এ ক্ষেত্রে যদি আত্তীকরণ বা নিজের পছন্দসই করা হয়, তাহলে তার দায়িত্ব দলকেই নিতে হবে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি না সেটিই আসল কথা।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রার্থী বাছাইয়ে যদি আত্তীকরণ কিংবা মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দসই করা হয়, তাহলে গণতন্ত্রের জন্য তা হবে অশনিসংকেত। যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। মনোনয়ন-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের অনেকেই এখনো জেলে। আবার অনেকেই ঠিকমতো প্রচারণা চালাতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে। নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।’ আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে এ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে সরকার-নিয়ন্ত্রিত একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার জরিপও পর্যালোচনা চলছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উইং সারা দেশের পৌরসভাগুলোর সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই জরিপ সম্পন্ন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব সংস্থার জরিপ ইতিমধ্যে পৌঁছানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে কেন্দ্রীয় ও বিভাগওয়ারি সাংগঠনিক সম্পাদকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় দলের গঠনতন্ত্রে সংশ্লিষ্ট কিছু ধারা-উপধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের আশঙ্কা, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে মাঠপর্যায়ে কোন্দল ও দলাদলি হতে পারে। বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিরা নিজেদের পছন্দসই নেতা-নেত্রীদের মনোনয়ন দিলে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারেন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। এতে সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ নাও করতে পারেন। বিদ্রোহী নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। নানা কারণে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত, গ্রহণযোগ্য প্রার্থীরাও বাদ পড়তে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ জন্য কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। সূত্রমতে, প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূলে নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চান ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য প্রতিটি পৌরসভায় একক মেয়র প্রার্থী নিশ্চিত করাই দলের নীতিনির্ধারকদের লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময়ই তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষরযুক্ত আগাম মনোনয়ন প্রত্যাহারপত্র জমা নিয়ে রাখা হতে পারে। বিএনপি সূত্র জানায়, দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বুধবার পৌরসভা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে মতামত নেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এতে বেশির ভাগ নেতাই পৌর নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। সবশেষে পৌরসভা নির্বাচনে যাওয়ার নীতিগত অবস্থান নেয় বিএনপি। এ নিয়ে গতকাল রাতে ২০-দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন বেগম জিয়া। পৌর নির্বাচনে কোথাও কোথাও জোটের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রতীক ব্যবহার করতে পারেন জোটের প্রার্থীরা।

জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা গতকাল এ নিয়ে দিনভর ব্যস্ত সময় কাটান। ২৩৬ পৌরসভার মনোনয়ন বাছাই করে রাতে বেগম খালেদা জিয়ার হাতে প্রার্থী তালিকা তুলে দেন তারা। তবে এক পৌরসভায় দুই থেকে তিনজন প্রার্থী রাখা হয়েছে। কোনো কারণে দলীয় প্রতীক পাওয়া প্রার্থী নির্বাচনে অযোগ্য হলে বিকল্প হিসেবে অন্যজনকে সমর্থন দেবে বিএনপি জোট। এদিকে আগামীকাল শনিবার বেশ কিছু দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যেতে পারে বিএনপি। কিছুদিনের জন্য তফসিল পেছানোর দাবিও তুলে ধরবেন তারা। গণগ্রেফতার বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরবে দলটি। দলটির মতে, আগামী ২ জানুয়ারি ৫০ লাখ নতুন ভোটার হবে। আসন্ন পৌর নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পক্ষে বিএনপি। এ বিষয়টিসহ নানা যুক্তি তুলে ধরা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখার কৌশলও গ্রহণ করা হচ্ছে। তাই নির্বাচনে যাওয়ার আগে বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। আরেক নেতা বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এটি কারও অজানা নয়। এর পরও এ নির্বাচনে যাওয়া উচিত। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে না গেলে তারা হতাশ হয়ে পড়বেন। এ ছাড়া এ নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে না। তাই বেগম জিয়াও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর