শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সন্ধান কমান্ডার নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ‘সুইসাইড স্কোয়াড’-এর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। বুধবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে টানা অভিযানে দুর্ধর্ষ এই স্কোয়াডের ছয় সদস্যকে পুলিশ পাকড়াও করতে সমর্থ হয়। এর মধ্যে একটি অভিযানে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন স্কোয়াডের সামরিক শাখার প্রধান আল বানি ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাই।

পুলিশ জানায়, জেএমবির এই সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরাই পুরান ঢাকার হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলা, ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে জঙ্গি ছিনতাই, গাবতলী ও আশুলিয়ার চেকপোস্টে পুলিশ খুন, আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতি এবং পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খান হত্যার সঙ্গে জড়িত। আর সবগুলো ঘটনাতেই উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আল বানি। সুইসাইড স্কোয়াডের পরিকল্পনা ছিল মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে হামলা চালানো। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার মধ্যরাতে দারুস সালামের দ্বীপনগর বালুর মাঠে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আল বানি নিহত হন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, একটি চাকু ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, আল বানি নিহত হওয়ার পর বুধবার রাতে মিরপুর, আবদুল্লাহপুর, গুলিস্তান ও কামরাঙ্গীরচরে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন ওমর ফারুক ওরফে মানিক, শাহ জালাল, হাফেজ কারি আহসান উল্লাহ মাহমুদ ও কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক। এদের মধ্যে চান মিয়া গাড়িচালক। তিনি সব কটি ঘটনায় জড়িত ছিলেন। হামলার পর তার গাড়িতেই জঙ্গিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ছাড়া অপর গ্রেফতাররা জেএমবিকে বাসা ভাড়া নিয়ে সহায়তা করেছে। এদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তাজিয়া মিছিলে হামলা : ২৩ অক্টোবর প্রথম প্রহরে পুরান ঢাকার হোসনি দালানে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে গ্রেনেড হামলায় ১১৫ জন আহত হন। ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজ্জাদ হোসেন নামের এক কিশোর এবং পাঁচ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামাল উদ্দিন নামে ৫৫ বছর বয়সী আরেকজনের মৃত্যু হয়। মনিরুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল জেএমবির। এ জন্য তারা মোহাম্মদপুরে বাসা ভাড়া নেয়। কিন্তু গাবতলীতে পুলিশ হত্যার পর রাজধানীতে পুলিশের তৎপরতায় সে পরিকল্পনা স্থগিত রাখে। ওই ঘটনায় সুমন নামে তাদের এক সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। এরপর জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আল বানি নিজেই হোসনি দালানে হামলার পরিকল্পনা আঁটেন। তিনিসহ মোট পাঁচজন ওই হামলায় অংশ নেন। হোসনি দালানের করবস্থান থেকে আল বানি নিজেই পাঁচটি বোমা ছুড়ে মারেন। এ সময় তার সঙ্গে রাশেদ ওরফে আশিক উপস্থিত ছিলেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল হামলার দৃশ্য ভিডিও করার। কিন্তু আলোর স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। সামরিক প্রধান আল বানি ও রাশেদ জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। হোসনি দালানে হামলার আগে তারা কামরাঙ্গীরচর এলাকাসহ রাজধানীর তিনটি এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। তিনি বলেন, হোসনি দালানের হামলায় অংশগ্রহণকারী বাকি তিনজনের নাম এখনো পাওয়া যায়নি। আসামিরা গাজীপুরের শালবন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় ফিরছিল। তখন এএসআই ইব্রাহিমকে তারা হত্যা করে। আশুলিয়ায় শিল্পপুলিশের কনস্টেবল মুকুল হোসেনকেও হত্যা করে আল বানি। সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, হত্যার পর হত্যাকারীদের একজন তাদের কাছে পানি চায়। যার দুই হাতে ঘা ছিল। নিহত আল বানির দুই হাতে সেই ঘায়ের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। মনিরুল ইসলাম বলেন, জেএমবি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। তবে তারা আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করতে পছন্দ করে। তারা চাপাতি ব্যবহার করে না। গেরিলা চাকু ব্যবহার করে। গ্রেফতার গ্রুপটির কাছ থেকে একটি গেরিলা চাকু, একটি পিস্তল ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধার পিস্তলটি আশুলিয়ায় শিল্পপুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি বলেন, জেএমবি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন মাওলানা সাইদুর রহমান। তবে তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর দায়িত্ব নেন তাসনিম। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর দায়িত্ব পান সায়েম ওরফে ফাহিম। তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। বর্তমানে ফারুক নামে একজন এই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই গ্রুপটির সঙ্গে ভারতীয় মুজাহিদদের সম্পর্ক রয়েছে। অপর একটি গ্রুপ শায়খ আবদুর রহমান নিহত হওয়ার পর নিষ্ক্রিয় ছিল। গত বছরের শেষের দিকে এই গ্রুপটি সক্রিয় হয়। বর্তমানে তারাই নাশকতা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়েছে দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যরা।

২১ এপ্রিল দুপুরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া বাজার শাখায় ঢুকে বোমা মেরে, গুলি চালিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তারক্ষীসহ সাতজনকে হত্যা করে ক্যাশ থেকে টাকা লুটের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেখানেও গ্রেফতারদের মধ্যে আল বানি জড়িত ছিলেন বলে জানান যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল। তিনি বলেন, এ গ্রুপের নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিদের নাম পাওয়া গেছে। তবে কৌশলগত কারণে তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না। কারা তাদের অর্থ সহায়তা করছে তাও জানা গেছে। মনোবল ভেঙে দিতেই পুলিশের ওপর ও হোসনি দালানের ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল বলে দাবি করেছে গ্রেফতার আসামিরা। এসব ঘটনায় তারা আন্তর্জাতিক সংগঠনের নাম জড়িয়ে ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিল।

এদিকে গতকাল গ্রেফতার পাঁচজনকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে পাঠানো হলে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সর্বশেষ খবর