শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

স্বেচ্ছাসেবী ও স্বজনদের দেশে ফেরার নির্দেশ অস্ট্রেলিয়ার

বাংলাদেশে ফের উচ্চমাত্রার ভ্রমণ সতর্কতা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য যারা এ দেশে অবস্থান করছেন তাদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সরকার। এ ছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে কর্মরত অস্ট্রেলিয়ার স্বেচ্ছাসেবীদের ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল অস্ট্রেলিয়া সরকারের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভাগের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে থাকা দেশটির নাগরিকদের জন্য গতকাল আবারও উচ্চমাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলার তথ্য উল্লেখ করে বাংলাদেশে উচ্চমাত্রার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে মন্তব্য করা হয়েছে। সর্বদা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গণমাধ্যমে চোখ রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে সফর পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিভাগ (ডিফ্যাট) বাংলাদেশ সম্পর্কে জানিয়েছিল, ‘এখানে (বাংলাদেশে) অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য ঝুঁকি আছে।’ এ বিষয়ে ডিফ্যাটের কাছে ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য’ আছে বলে জানিয়েছিলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড। তাই ‘সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি’র কারণ দেখিয়ে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভাগের ওয়েবসাইট অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় ও নিজ দেশের নাগরিকদের উচ্চমাত্রার সতর্ক থাকতে বলেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে ভারত, নেপাল বা শ্রীলঙ্কা থেকে কোনো অস্ট্রেলিয়ানকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশের কথা বলা নেই। বরং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সফরের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে এবং আফগানিস্তান সফরে না যেতে বলা হয়েছে। মালদ্বীপের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সতর্কতা রাখার কথা বলা হয়েছে। ভুটানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সতর্কতা নেই। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার ভ্রমণ সতর্কতার চারটি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে উচ্চমাত্রার সতর্কতা। তৃতীয় ধাপে রয়েছে ভ্রমণ পুনর্বিবেচনা ও চতুর্থ বা শেষ ধাপ হলো, ভ্রমণ না করার পরামর্শ। সেই হিসাবে বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা মাত্রা দ্বিতীয় ধাপের। সম্প্রতি ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলা ও জাপানের নাগরিক হোশি কুনিও হত্যার পর  যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের সতর্কবার্তা দেয়। পুরান ঢাকার হোসনি দালানে হামলা এবং সর্বশেষ বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলার ঘটনাতেও তারা তাদের ভ্রমণ সতর্কতা হালনাগাদ করে। এর মধ্যে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাইকার প্রকল্পগুলোতে কাজ করা জাপানি স্বেচ্ছাসেবীদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কবার্তার বিষয়গুলো বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর একান্তই নিজস্ব বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশে কয়েকটি ঘটনায় আইএসের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ভ্রমণ সতর্কতার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কয়েকটি রাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে ইতিমধ্যেই চিঠি দেওয়া, সে অনুয়ায়ী কয়েকটি রাষ্ট্র তাদের সতর্কবার্তা থেকে আইএস প্রসঙ্গ সরিয়ে নিয়েছে। অবশ্য কেউ কেউ সরায়নি। অন্যদিকে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেছেন, বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে নামাজরতদের ওপর হামলার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। আবার আইএসের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে বলে খবরে বলা হচ্ছে। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য নতুন পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়া হয়তো তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার একেবারেই যৌক্তিতা নেই এটা বলা যাবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকার পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা করছে। এখন কূটনৈতিক পর্যায়ে সার্বিক পর্যালোচনা করে দেখাই হবে সর্বোত্তম উপায়।

সর্বশেষ খবর