শিরোনাম
রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আতঙ্কে শিয়া সম্প্রদায় নিরাপত্তা জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসনি দালানে বিস্ফোরণ এবং বগুড়ার শিয়া মসজিদে গুলির ঘটনার পর আতঙ্কে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমরা। ঘরে-বাইরে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন তাদের অনেকেই। শিগগিরই শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এ সংক্রান্তে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবে। তবে সরকার বলছে, শিয়া সম্প্রদায়ের আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। দেশের সব এলাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনাস্থল মসজিদ ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে শিয়া সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি আবারও বলছি, শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।’

রাজধানীতে শিয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রায় একই কথা বলেন ঢাকা মহানগর  গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কেবল মসজিদ নয়, শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক এলাকাতেও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২ ডিসেম্বর আশুরার ৪০ দিন উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মিছিলের আগের দিন থেকে মিছিলের দিন পর্যন্ত পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। হোসাইনি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি মীর জুলফিকার আলী বলেন, এটা কখনো সুন্নিদের কাজ নয়। দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল এটা করে যাচ্ছে। তবে আমরা আতঙ্কে রয়েছি, যদিও পুলিশ প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে। ৪০ দিনের মিছিলের পরই প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের কথাগুলো বলব। আশা করি, তিনি আমাদের কথা শুনবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে, আমাদের খুলনার নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, খুলনায় অবস্থানরত শিয়া মুসলমানদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হলেও তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন হয়নি বলে অভিযোগ শিয়া সম্প্রদায়ের লোকদের। নিজেদের উদ্যোগেই তাদের মসজিদ ও মাদ্রাসায় তারা সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করেছেন। খুলনায় শিয়া পরিচালিত ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ সৈয়দ ইব্রাহিম খলিল রাজাভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ আমাদের মসজিদ ও মাদ্রাসার ওপর নজরদারি রেখেছেন বলে জেনেছি। তবে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। আমারাও নিজেদের উদ্যোগে দুটি প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। প্রায় একই কথা বলেন নগরীর খালিশপুর হুসাইনি মিশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ গামখার হোসেন। জানা যায়, খুলনা মহানগরীর আলতাপোল লেন, টুটপাড়া ও খালিশপুর বিহারি কাম্পে প্রায় ৫০০ শিয়া মুসলমান পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। খুলনা শহরে শিয়াদের দুটি মসজিদের বড় মসজিদটি ‘ইমাম বারা কাছরে হোসেনি’ আলতাপোল লেনে অবস্থিত। অপরটি খালিশপুরে। দুটি মসজিদ কেন্দ্রিক দুটি মাদ্রাসাও আছে। এ ছাড়া বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া উপজেলায়ও শিয়া মুসলমান বসবাস করেন। খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ ও মাদ্রাসার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পুলিশি ও গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, আতঙ্ক কাটছে না রাজশাহীর শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের। নগরীর উপশহর ইমামবারা ও শিয়া মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফর ইমাম জানান, বগুড়ার ঘটনার পর তারা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন। পুলিশ একদিন তাদের দিকে নজর রাখলেও এখন তা নেই। ফলে তাদের মধ্যে থেকে আতঙ্ক দূর হয়নি। নগরীর মালদা কলোনি ও বিহারি কলোনির শিয়াদের মধ্যেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। তবে নগর পুলিশের কমিশনার মো. শামসুদ্দিন জানান, নগরীর যেসব এলাকায় শিয়াদের বাস ওইসব এলাকায় পুলিশ বাড়তি নজরদারি রাখছে। উপশহর ইমামবারা ও শিয়া মসজিদকে ঘিরে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া উপশহর পুলিশ ফাঁড়িকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর