রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা বিএনপিতে শাহজাহান জাপায় এরশাদ

দলীয় মেয়র পদে মনোনয়নের ক্ষমতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষমতা থাকছে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষমতা দিয়েছেন যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহানের ওপর। অন্যদিকে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ক্ষমতা দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের হাতেই থাকছে। গতকাল পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে অন্তত ১২টি দল। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি এখন অনেকটাই নিশ্চিত। গতকাল দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা ইসিতে জমা দিয়েছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌরসভায় মেয়র নির্বাচন হবে বলে কে প্রার্থীদের প্রত্যয়ন করবেন, তা জানাতে গতকাল পর্যন্ত দলগুলোকে সময় বেঁধে দিয়েছিল ইসি।

গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়  বিভাগীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক এ বি এম রিয়াজুল করিম কাওসার ইসি সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে একটি চিঠি দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দল মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। নির্বাচন কমিশনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়ার পর সহ-সম্পাদক কাওসার বলেন, দল মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রধানের স্বাক্ষরে প্রত্যয়ন পেলে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন; যা দলীয় প্রার্থী, নেতা-কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের উজ্জীবিত করবে। এর আগে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল তাদের প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতাবান ব্যক্তির নাম জমা দিয়ে আসে ইসিতে। খালেদা জিয়া দলের যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহানকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন পৌরসভায় দল মনোনীত প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতা একজনকে দিয়ে ইসিকে জানানোর মধ্য দিয়ে দলটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। এখন শুধু ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বাকি। ইসিতে বিএনপির চিঠি দেওয়ার পর সহ-প্রচার সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, প্রত্যয়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির তালিকা জমা দেওয়ার শেষ দিনে ইসি ও ২৩৬টি অনুলিপি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জন্য জমা দিয়েছি। ভোটের সময় পেছানোয় বিএনপির দাবি নিয়ে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। এসব বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কথা বলবেন। আমরা ভোটে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আগেও স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে বলেন বিএনপি প্রতিনিধি প্রিন্স। এদিকে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতা দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের হাতে থাকছে। এ-সংক্রান্ত চিঠি ইসিতে দিয়ে আসেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব নুরুল ইসলাম। এ ছাড়া বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষমতা থাকছে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর হাতে।

আওয়ামী লীগের পর তাদের জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি তার দলীয় মেয়র প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতাবান ব্যক্তির নাম জমা দেয় ইসির উপসচিব শামসুল আলমের কাছে। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী প্রত্যয়ন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ওয়ার্কার্স পার্টির মতো জাসদেরও প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতা দলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে দিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছেন দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

একইভাবে জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম নিজেদের দল মনোনীতদের প্রত্যয়নকারী থাকবেন বলে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ হবেন দলটির মনোনীত প্রার্থীর প্রত্যয়নকারী। এ ছাড়া এনপিপির প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন দলের চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনয়ন দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেবেন বলে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পিডিপি ও বিএনএফও তাদের প্রার্থী প্রত্যয়নকারীর নাম জানিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে। বর্তমানে ৪০টি নিবন্ধিত দল রয়েছে।

দেশের ২৩৬ পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। মেয়র পদে দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যয়ন করার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিধান রাখা হয়েছে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপদাধিকারীর প্রত্যয়ন নিয়ে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা নেই। কিন্তু এর বাইরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যয়নের ক্ষমতা কাকে দেওয়া হলো তার নাম, নমুনা স্বাক্ষর ও পদবি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও ইসিতে পাঠানোর বিধান রয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় রয়েছে। বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। ৩০ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে ভোট হবে। মেয়র পদে দলভিত্তিক হলেও সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় ভোট হবে।

সর্বশেষ খবর