মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পিআইএ কর্মকর্তাসহ চার জঙ্গি গ্রেফতার

পাকিস্তান জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিল একজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বিমানবন্দর ও খিলগাঁও থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিবার দিবাগত রাতে পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন ইদ্রিস শেখ, মকবুল শরিফ, মো. সালাম ও মোস্তফা জামান। তাদের কাছ থেকে জঙ্গিবাদবিষয়ক ২৬টি বই, তিনটি পাসপোর্ট, পাকিস্তানি ৪ হাজার রুপি, ভারতীয় পণ্যসামগ্রী, বাহরাইনের ১৩০০ ডলার, জর্ডানের ১৬০০ ডলার জব্দ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ইদ্রিস ও মকবুল পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী। ইদ্রিস ২০০২ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এর বাইরে মোস্তফা জামান পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) একজন কর্মকর্তা। এরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যাসহ ভয়ঙ্কর নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় দুটি ও খিলগাঁও থানায় একটি মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ইদ্রিস ও মকবুলের পাকিস্তানি পাসপোর্ট রয়েছে। তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত করেন। এদের মধ্যে ইদ্রিস গত দুই বছরেই ৪৮ বার পাকিস্তানে যাতায়াত করেছেন বলে তার পাসপোর্ট থেকে জানা গেছে। গ্রেফতারকৃতরা সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন জানিয়ে মনিরুল আরও বলেন, বাংলাদেশে জেএমবিকে পুনরায় সক্রিয় করা এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা সৃষ্টির জন্য তারা কাজ করছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। জব্দ পাঁচটি মোবাইল ফোন সেটের মধ্যে ইদ্রিসেরটি ‘স্পাই মোবাইল সেট’ উল্লেখ করে যুগ্ম-কমিশনার বলেন, এটা দিয়ে তিনি দেশের বাইরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং তথ্য দেওয়া-নেওয়া করতেন। একটি হাইকমিশনের নারী কর্মকর্তার সঙ্গেও তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইদ্রিস ১৯৮৫ সালে ভারত হয়ে পাকিস্তান যান। সেখানে ১৯৯০ সালে পাকিস্তানি এক নারীকে বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন। পরে ২০০২ সালে দেশটির ‘পাক-মুসলিম অ্যালায়েন্স’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ২০০৭ সালে তিনি বাংলাদেশে ফেরত এসে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। মকবুলও ১৯৮৫ সালে পাকিস্তান যান এবং নিয়মিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান যাতায়াত করতেন। কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে পাকিস্তানে জেএমবির সঙ্গে সক্রিয় মকবুল জঙ্গি সংগঠনকে অর্থায়নও করেন। সালামও নিয়মিত পাকিস্তান যাতায়াত করেন। এ ছাড়া মোস্তফা পিআইএ’র অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রাফিক ইন্সপেক্টর। এরা সবাই ভারতীয় ও পাকস্তানি জাল মুদ্রা পাচারে জড়িত বলেও দাবি করেছেন ডিবি কর্মকর্তারা। গোয়েন্দাদের ধারণা, ত্রিশালে আসামি ছিনতাই, সাভারে ব্যাংক ডাকাতি এবং সম্প্রতি হোসনি দালানে বোমা হামলা ও আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যার ঘটনায় জেএমবি জঙ্গিরা জড়িত। বুধবার রাজধানীর দারুসসালামে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন এক জেএমবি সদস্য নিহত হওয়ার পর সংগঠনটির আরও পাঁচজনকে গ্রেফতারের কথা জানায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, বন্দুকযুদ্ধে নিহত আল বানী ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাইসহ গ্রেফতারকৃতরা ওইসব হামলায় অংশ নিয়েছেন অথবা সহযোগিতা করেছেন। নিহত হোজ্জা ভাইকে জেএমবির সামরিক শাখার সুইসাইড স্কোয়াডের প্রধান বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

সর্বশেষ খবর