বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল দাবি জানালেও পৌরসভা নির্বাচন পেছাবে না নির্বাচন কমিশন। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা ভোটের তারিখ ঠিক রাখছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া প্রচারে এমপিদের অংশগ্রহণের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হচ্ছে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ মুহূর্তে আচরণবিধি সংশোধন ও ভোট পেছানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। দেশের প্রধান তিনটি দল গত রবিবার নির্বাচন কমিশনে এসে পৌরসভার ভোট পেছানো ও এমপিদের প্রচারণায় সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। তাদের প্রস্তাবগুলো নিয়ে গতকাল চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বৈঠকে বসেন সিইসি। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় শেরেবাংলা নগরের ইসি কার্যালয় ত্যাগের আগে কাজী রকিবউদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় যেতে দিতে বিধি সংশোধনের দাবি এসেছে। আমরা আলোচনা করে দেখেছি- তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যায়ে কোনো সংশোধনী আনা সমীচীন হবে না। বিএনপির ভোট পেছানোর দাবির বিষয়ে সিইসি জানান, আইন-বিধি সংশোধনের পর খুব স্বল্প সময় হাতে নিয়ে তফসিল করা হয়েছে। আর পেছানোও সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ২০ ডিসেম্বরও যদি ভোটের সময় রেখে তফসিল করা যেত, পেছানোর সুযোগ থাকত। শেষ সময়ে এসে তফসিল দিতে গিয়ে ৩০ ডিসেম্বরে ভোটের তারিখ রেখে পর্যাপ্ত সময় রাখা হয়েছে। এরপরও একদিন পেছানো যায় কিনা যাচাই করে দেখেছি-সে সুযোগও নেই বলে জানান কাজী রকিবউদ্দীন। প্রধান তিন দল ছাড়াও কয়েকটি দল প্রস্তাবক-সমর্থকসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে ইসির কাছে সুপারিশ রেখেছিল। তাও পর্যালোচনা করা হয়েছে। শেষ সময়ে এসে আর নতুন কিছু সংশোধন সম্ভব নয় বলে জানান সিইসি। ইসির বিদ্যমান আইন-বিধি নিয়ে নানা ধরনের অসঙ্গতি ও দলগুলোর দাবির বিষয়ে ভবিষ্যতে পর্যালোচনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিদ্যমান আচরণবিধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় যেতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে ‘অস্পষ্ট’ রেখে এড়িয়ে যান সিইসি। এ বিষয়ে ‘সরাসরি’ উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, এটা তো আইনেই বলা রয়েছে। বিদ্যমান আচরণবিধিতে দলীয় প্রধানদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সুযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে দলীয় প্রধানের প্রচারে হেলিকপ্টার পর্যন্ত ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে বিধিতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, উপ-নেতা, মন্ত্রীসহ সমপর্যায়ের সুবিধাভোগী ব্যক্তি, এমপি, সিটি মেয়রদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি হয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে প্রচারণায় যেতে বিধিনিষেধে পড়তে হতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ওপর এ বিধি-নিষেধ আরোপ করা যাবে না। এক দলের শীর্ষনেতা প্রচারে যাবেন, অন্যজন যেতে পারবেন না- এ ধরনের ‘অসম’ আচরণবিধি ইসির ‘ভুলে’ হয়েছে বলে মনে করেন না সিইসি। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ করতে এমন বিধি কাদের ভুলে হয়েছে? জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এটা তো ভুল না, এটা একটা বিষয়ে পরিমাপ করা। এটাই তো (এ নির্বাচন) সর্বশেষ না! আমরা অভিজ্ঞতা নেব। যদি দেখি কোনোটা সঠিক হচ্ছে না; সামনে অন্য নির্বাচন রয়েছে। তাতে এগুলোকে শুধরানোর ব্যবস্থা করব। জামায়াত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেও বিধি-নিষেধ আরোপে ওয়ার্কার্স পার্টির দাবির বিষয়ে সিইসি বলেন, আইন খুব পরিষ্কার। নিবন্ধিত দল দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে। তবে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল হলে দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। তবে তাদের নিবন্ধন বাতিল হলেও তাদের দল তো বাতিল হচ্ছে না। কাজেই তারা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না।