মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ

উত্তরায় ব্যাপক সংঘর্ষ ভাঙচুর পুলিশের গুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় পোশাক পরিধান নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) ক্যাম্পাস এলাকায় তুলকালাম হয়েছে। গতকাল বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা বিক্ষুব্ধরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘেরাও, বিক্ষোভ সমাবেশ, সড়ক অবরোধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশতাধিক রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় ছাত্র-শিক্ষকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ মুসল্লি ও অভিভাবকদের প্রতিনিধি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে পুলিশসূত্র নিশ্চিত করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (মিডিয়া) উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কিছু সিদ্ধান্তের কারণে ছাত্রদের একটি অংশ সংক্ষুব্ধ হয়। পরে তারা বহিরাগতদের নিয়ে এর প্রতিবাদ করার চেষ্টা চালালে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, আইইউবিএটির ভিসি আলিমুল্লাহ মিয়ানের গ্রেফতার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন স্থানীয় মুসল্লি, মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা। তুরাগের সুবহানিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে সহস াধিক মুসল্লি আইইউবিএটি ফটকে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন টঙ্গী দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাসউদুল করীম, দক্ষিণখান গাওয়াইর ইসলামিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস জহির ইবনে মুসলিম, বিমানবন্দর বাবুসসালাম মাদ্রসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আনিসুর রহমান, দক্ষিণখান আশ্রাফিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি শহীদুল্লাহ, মাওলানা আবদুল আলীম নেজামীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মুসল্লি। বিক্ষুব্ধরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০-১৫টি বাস ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করছিলেন। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ করে রাখেন। আটকে পড়েন ৫ শতাধিক ছাত্রছাত্রী। শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। অন্যদিকে মুসল্লিদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগের শিক্ষক শায়খ ইমরান আকন্দ শুভসহ পাঁচ শিক্ষক ও ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ছাড়া পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপে প্রায় ৪০ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি পারভেজ জানান, দুপুরে ক্লাস চলছিল। ২টার দিকে শব্দ শুনে বাইরে এসে দেখা যায় মুসল্লিরা বিক্ষোভ করছেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০-১৫টি বাস ভাঙচুর করেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভকারীদের বাধা দিলে তারা মুসল্লিদের হামলার শিকার হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠেন মুসল্লিরা। একপর‌্যায়ে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুলিশসূত্র জানায়, বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় পুলিশ রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিতে চাইলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও অর্ধশতাধিক টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, ভিসি আলিমুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ধর্মীয় পোশাক পরতে নিষেধ করছেন। এরই মধ্যে ধর্মীয় পোশাক পরিহিত অবস্থায় কয়েকজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এলে তাদের পরীক্ষা দিতে দেননি। তিনি এ দেশকে ইউরোপ-আমেরিকার মতো ধর্মহীন বানাতে চান। তাদের এ দিবাস্বপ্ন আদৌ বাস্তবায়ন হবে না।

বিক্ষোভকারীরা আরও বলেন, দুর্বৃত্ত, ইসলামবিদ্বেষী ভিসি আলিমুল্লাহকে অবিলম্বে অপসারণ ও গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং ধর্মীয় পোশাকের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে হয়রানির শিকার ছাত্রছাত্রীদের নির্বিঘেœ পড়ালেখার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও-অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খবর শোনামাত্রই র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ভবিষ্যতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার বিধানকুমার ত্রিপুরা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি দ্রুততর সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টির সুষ্ঠু ও স্থায়ী সমাধান করার জন্য। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর