শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের উৎস মওদুদী দর্শন

জুলকার নাইন

জঙ্গিবাদের উৎস মওদুদী দর্শন

মিছবাহুর রহমান চৌধুরী

শত শত বছর ধরে বিরাজমান ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উৎস জামায়াতের মওদুদী দর্শন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, এই দর্শনের অনুসারীরাই মসজিদে গুলি ও তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার মতো ন্যক্কারজনক কাজে জড়িত। তাই অনতিবিলম্বে এদের নির্মূল করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত কম। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ২ লাখও শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী নয়। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বাংলাদেশে তাজিয়া মিছিল হচ্ছে। কখনো শোনা যায়নি সেখানে কোনো সমস্যা হয়েছে। বোমা বা গুলি তো দূরের কথা, কখনো তাজিয়া মিছিলে ঢিল দেওয়ার কথাও শোনা যায়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশে সবসময়ই একটি ধর্মীয় সম্প্রীতি বিদ্যমান ছিল। সেই তাজিয়া মিছিলে এখন বোমা ফাটানো হচ্ছে। শিয়া মসজিদে নামাজরত মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে মসজিদের মুয়াজ্জিনকে নিহত করা হচ্ছে। এটা তখনই হচ্ছে, যখন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া চলমান এবং কিছু চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, দুঃখজনকভাবে ইসলামের নাম ব্যবহার করে এসব খুন-খারাবি করা হচ্ছে। ইসলাম এসব অপকর্মকে সমর্থন তো দূরের কথা বরং এগুলোকে ঘৃণা করে। এটা ইসলামী কোনো কর্মকাণ্ড নয়, এটা ন্যক্কারজনক, অমানবিক ও বর্বর। ইসলামে এগুলোর কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, যারা ইসলামের মূল ধারায় নেই, যারা ইসলামের মূল দর্শনের বাইরে গিয়ে মওদুদী দর্শন সৃষ্টি করেছে তারাই এগুলো করছে। এই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, রগকাটা, হাতকাটা এগুলো তাদের কাজ। এ জন্য আমরা বরাবরই মওদুদী দর্শনের বইপুস্তক জব্দ করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। সেই সঙ্গে মওদুদী দর্শনের মূল সংগঠন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। জামায়াতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উৎসস্থলগুলো খুঁজে বের করে সমূলে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণকেও আমরা সচেতন করছি। অবশ্য আমাদের আগে জনগণই মওদুদী দর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তারা বিভিন্ন ছদ্মবেশে জনগণের মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জনগণই তাদের খুঁজে বের করে নিয়ে আসছে এবং আগামীতেও আসবে।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আইএস নেই। কিন্তু জামায়াতের তৈরি সন্ত্রাসীরা আছে। তারা তরুণ প্রজম্মকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত করছে। তাই এসব কথা তরুণদেরকে বোঝাতে হবে। বিভ্রান্তির পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। শুধু শাস্তি দিলে হবে না। তাদের উদ্দেশে আমি বলব, তোমরা ইসলামের মূল দর্শন-উদারতা মানবতায় ফিরে আস। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আমি তোমাকে সমগ্র বিশ্বের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। রহমত কখনো ভক্ষক হতে পারে না। তাই নিঃসন্দেহে যারা ইসলামের অনুসারী তারা মওদুদীর দর্শন ত্যাগ করে আল্লাহ ও নবীর দেখানো পথে আসবেন বলেই আমরা আশা করি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ আমাদের আগেই মওদুদী দর্শনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা সচেতন থাকবেন যেন মওদুদী দর্শনের লোকেরা আমাদের গ্রামগঞ্জের মসজিদ-মাদ্রাসায় অনুপ্রবেশ করতে না পারে। মাওলানা মিছবাহুর জানান, বাংলাদেশের হাজার হাজার মসজিদে খুতবায় ইমাম ও মাওলানারা ইতিমধ্যেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করেছেন। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ আরও ত্বরান্বিত হবে বলেই আমরা আশা করি।

সর্বশেষ খবর