মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নাইকো মামলায় খালেদার জামিন

অভিযোগ গঠন ২৮ ডিসেম্বর

আদালত প্রতিবেদক

নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিচারিক আদালতে আÍসমর্পণ করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জামিন আবেদন করেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আদালতে হাজির হয়ে শুনানিতে অংশ নেন খালেদা জিয়া। ১২টা ২৫ মিনিটে মামলার শুনানি শুরু হয়ে ১২টা ৩৫ মিনিটে শেষ হয়। এ সময় খালেদা জিয়াকে এজলাসের সামনে একটি চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়। জামিনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতকে বলেন, একই ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা ছিল। হাইকোর্টে তার মামলা বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার চলছে। উচ্চ আদালত এ মামলায় এর আগে জামিন দিয়েছিলেন এবং এ মামলা বাতিলে রুল বাতিল করে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আÍসমর্পণ করতে বলেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এ মামলায় জামিনে ছিলেন। এ ছাড়া হাইকোর্ট আদেশে তার জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছেন। তিনি কখনো জামিনের অপব্যবহার করেননি। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাই পূর্বশর্তে অথবা যে কোনো শর্তে তাকে জামিন দেওয়া হোক। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, মীর আবদুস সালাম ও এমদাদুল হক দুলু জামিনের বিরোধিতা করে আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আÍসাৎ করেছেন। তিনি এ মামলায় আগে জামিনে ছিলেন, এখন আর জামিনে নেই। আসামির জামিনের মেয়াদ শেষ। এ ছাড়া আসামি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সম্পদের হেফাজতকারী হওয়া সত্তে¡ও প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি ও অন্য আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ১২টা ৩৫ মিনিটে আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে পূর্বশর্তে জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আগামী ২৮ ডিসেম্বর এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। পরে ১২টা ৩৭ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

আদালতের পরিবেশ : সকাল থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদালত এলাকায় তাদের আইনজীবীদের চেম্বারে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার নর্থসাউথ রোড থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দলের দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সমবেত হন। তারা মুহুর্মুহু স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন।

সকাল ১০টার পর থেকে রায়সাহেব বাজার মোড়সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আদালতপাড়ায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও মিছিল করেন।

অন্যদিকে আদালত এলাকায় সকাল থেকেই পুলিশ কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিপুলসংখ্যক র‌্যাব ও সাদা পোশাকের অতিরিক্ত পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আদালত চত্বর ঘিরে রাখেন। আদালত এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হয়। এ ছাড়া আদালতের আশপাশের ভবনের ছাদেও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় এবং ডিএমপির ভিডিও ইউনিট পুরো এলাকা মনিটরিং ও ভিডিও করে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। খালেদা জিয়া আদালতপাড়া ছেড়ে যাওয়ার পর ওই এলাকায় স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হয়।

মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। পরে ঘটনার তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আবেদনে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর হাইকোর্টে চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ২৮ মে। প্রায় সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে রুল নিষ্পত্তি করে গত ১৮ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে মামলার স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে বিচারিক আদালতে আÍসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের ওই রায়ের কপি ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এসে পৌঁছালে পরদিন ওই বিচারক ৩০ নভেম্বর মামলাটির পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন চারদলীয় জোট সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া (সিলভার সেলিম) ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

সর্বশেষ খবর