আমি সবেমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষা শেষ করেছি। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র তখন স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন চলছিল। চারদিক থেকে বাঙালিদের হত্যা করার খবর আসছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আমি সংকল্পবদ্ধ হই। ওই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে পড়লাম মৌলভীবাজারের রাজনগরের নিজ গ্রামের উদ্দেশে। গ্রামে পৌঁছে জানতে পারলাম তৎকালীন মেজর সি আর দত্ত মৌলভীবাজার মহকুমায় আসছেন। আমি গ্রামের কয়েকজন যুবক ও আমার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি। প্রায় ৩০ মিনিট মেজর সি আর দত্তের সঙ্গে আলোচনা হয়। তার কথায় সহজেই বুঝতে পারলাম দেশে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তিন/চার দিন পর মায়ের গয়না বেচে ভারতের ত্রিপুরার উদ্দেশে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে পূর্ব যোগাযোগের সূত্র ধরে আরও ১১ জন যুবক ওই যাত্রায় শামিল হয়। আমরা এপ্রিলের শুরুতে রাতের আঁধারে সীমান্ত পাড়ি দেই। আমার সঙ্গী ১১ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ফেনীর জয়নাল হাজারী (সাবেক এমপি) ও মৌলভীবাজার জেলার সদ্যপ্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, মকবুল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রধান সচিব নজরুল ইসলাম, সাবেক সচিব আবদুল আজিজ ও আতিকুল্লাহ খান মাসুদ। আমরা ৪ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ত্রিপুরায় অন্তর্ভুক্ত হই। সেখান থেকে কলকাতা হয়ে আমরা বিহার রাজ্যের আর্মি ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাই। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ভারী অস্ত্র ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের ওপর হাতে-কলমে পাঁচ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে আমরা কলকাতা হয়ে আগরতলা আসি। পরে সুযোগ বুঝে শমসেরনগর দিয়ে মৌলভীবাজারে ঢুকে পড়ি।