বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পাকিস্তানের উচিত দ্রুত বাস্তবতা অনুধাবন করে দায় স্বীকার করা

জুলকার নাইন

পাকিস্তানের উচিত দ্রুত বাস্তবতা অনুধাবন করে দায় স্বীকার করা

হুমায়ুন কবির

একাত্তরে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য পাকিস্তানের দ্রুত বাস্তবতা অনুধাবন করে দায় স্বীকার করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, পাকিস্তান সরকারের যে বিবৃতি আমরা দেখেছি, তাতে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এটা অনভিপ্রেত এবং মোটেও সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করার মতো কোনো নৈতিক অবস্থান পাকিস্তানের নেই। শুধু গণহত্যা নয়, সে সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় না স্বীকার করার কোনো নৈতিক সুযোগও তাদের সামনে নেই। দায় তাদের নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি তারা দায় স্বীকার করবে ততই বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরির সুযোগ হবে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ১৯৭৪ সালে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে এবং পাকিস্তানের দুঃখ প্রকাশের আলোকেই তৎকালীন সময়ে অভিযুক্ত পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাদের ফেরত যেতে দেওয়া হয়। সেই চুক্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা পাকিস্তানি দোসরদের বিচার করা যাবে না, এমন কোনো কথা কোথাও উলে­খ ছিল না। কাজেই বাংলাদেশের যখন যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে, তখন পাকিস্তানের যে কোনো প্রতিক্রিয়াই আসলে অতি প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, পাকিস্তান যদি এখন শুভবুদ্ধির উদ্ভব ঘটিয়ে পুরো ঘটনার দায় স্বীকার করে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তাহলেই পুরো বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে পারে। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবির বলেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হলো সর্বশেষ পদক্ষেপ। এরপর আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। তাই সম্পর্ক ছিন্ন করার আগে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা তা ভেবে দেখাই যৌক্তিক। এখানে দ্বিপক্ষীয় বিষয় আছে, আঞ্চলিক সম্পর্কের বিষয়গুলোও আছে। তাই সম্পর্ক ছিন্ন করার আগে অবশ্যই সব বিষয় গভীরভাবে ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, এখন পাকিস্তান যে ধরনের মনোভাব দেখাচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবল এবং সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে থাকব। আশা করি, পাকিস্তান হয়তো সত্য ও বাস্তব অবস্থান অনুধাবন করে তাদের দায় স্বীকার করে এ ইস্যুর সমাধান করবে। সার্ক থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কার করতে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হুমায়ুন কবির বলেন, এটা দাবি হিসেবে ভালো। কিন্তু সার্ক থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের এককভাবে কিছু করার সামর্থ্য নেই। সার্কের যে কোনো সিদ্ধান্তই হতে হবে সর্বসম্মতভাবে। কাজেই সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত কেমন হবে তা বলা কঠিন। আবার আমরা যখন আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা বলছি তখন এমন ইস্যু সামনে আসবে কিনা তা-ও ভেবে দেখতে হবে।

হুমায়ুন কবির বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কিছু দ্বিপক্ষীয় ইস্যু এখনো ঝুলে আছে। বাংলাদেশের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা, সম্পদের ভাগাভাগি ও বাংলাদেশে থাকা পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ইস্যু এখনো জারি রয়েছে। তবে এগুলোর বাইরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুকে আমি আলাদাভাবে দেখতে চাই। কারণ, এটি আসলেই একটি ভিন্ন বিষয়। এর সঙ্গে বাংলাদেশের আত্নিক বিষয় জড়িত। মানুষের প্রতি যে অবিচার হয়েছে তা থেকে উত্তরণ ও সাধারণ মানুষের আÍসম্মানবোধও এ বিচারের সঙ্গে জড়িত। আর এখানে বাংলাদেশি দোসরদের বিচার হচ্ছে, পাকিস্তানের নয়। তাই পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া দেখানোরও কিছু নেই।

সর্বশেষ খবর