শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিদ্রোহী দমাতে ব্যস্ত দুই দল

তৃণমূলে ছুটছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা

রফিকুল ইসলাম রনি

বিদ্রোহী দমাতে ব্যস্ত দুই দল

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৫ পৌরসভা নির্বাচনে শতাধিক পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ বাধা দূর করতে নয় দিনের বিশেষ মিশন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চান প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনে একক প্রার্থীই মাঠে থাকুক। তাই দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটছেন তৃণমূলে। প্রথমে তারা বুঝিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেবেন। এতে কাজ না হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার করা হবে। সূত্রমতে, বিদ্রোহীদের বুঝিয়ে কীভাবে বসিয়ে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে করণীয় ঠিক করতে গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বি এম মোজাম্মেল হক, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংসদ সদস্য নন এমন কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূলে থাকতে হবে। বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাত সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী নয় দিনের মধ্যে যেসব জেলায় পৌর নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আছে, সেখানে জেলা নেতাদের সঙ্গে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলব। বিদ্রোহীদের বসিয়ে দেওয়াই আমাদের এখন অন্যতম কাজ। সূত্রমতে, মাদারীপুরের কালকিনিতে বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে গতকালই আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ তিন সাংগঠনিক সম্পাদক সেখানে যান। বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন ও বি এম মোজাম্মেল হক কালকিনিতে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। এ লক্ষ্যে এ তিন নেতা কালকিনির স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গতকাল ঢাকা থেকে বীরগঞ্জে গেছেন। সেখানে দলের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে উদ্যোগ নেবেন তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন পৌর এলাকায় দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে শীর্ষস্থানীয় নেতারা কেন্দ্র থেকে কাজ শুরু করেছেন। জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয়স্বজনরা একক প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ পড়ায় তারা এখন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব বিদ্রোহী প্রার্থী অনেকটা অনড় অবস্থানে রয়েছেন। ২৩৫ পৌরসভার প্রতিটিতে গড়ে সাতজন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আগাম কোনো চিঠি না নেওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছে দলটি। তাই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে গিয়ে বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, মনোনয়নবঞ্চিতরা যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তবে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। অবশ্য বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কারের মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সূত্র জানায়, পৌর নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। গত দুই দিন পৌর মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের তালিকা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তৃণমূলের মতামত এবং বিভিন্ন রিপোর্টের ভিত্তিতে দলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের মেয়র পদে একক প্রার্থী করে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অনেকে না বুঝে হয়তো বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাই বুঝিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে। মাঠে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দেখতে চাই। এদিকে গতকাল ধানমন্ডিতে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, ৭১টি পৌরসভায় বিকল্প প্রার্থী রয়েছে। ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি পৌরসভায়ও কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। তৃণমূল পর্যায় থেকে যে গাইডলাইন দিয়েছিলাম তাদের (তৃণমূল) সুপারিশ এবং আমাদের মাঠ জরিপের তথ্য নিয়ে প্রার্থিতা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলের মনোনয়ন চাওয়া এবং পাওয়ার মতো অনেক যোগ্য নেতা আছেন। কিন্তু বেছে নিতে হয় একজনকে। তাই মান-অভিমান থাকতেই পারে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় রাগ-অভিমান ভুলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন— এমনটাই প্রত্যাশা। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে তৃণমূল আওয়ামী লীগ যে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ তা প্রমাণ করতে চাই।

সর্বশেষ খবর