শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সরে দাঁড়ালে বিএনপিতে বড় পদ দেওয়ার চিন্তা

মাহমুদ আজহার

রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম। তিনি পৌর বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান মেয়র। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি গত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। তাই এবারও আমি বিজয়ের ব্যাপারে চরম আশাবাদী। দলীয় প্রতীক না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচনে লড়ে যাব।’ একই বক্তব্য চারঘাট পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কায়েম উদ্দিনের। পৌর বিএনপির এ সভাপতি জানান ‘কেন্দ্র থেকে  সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছে। কিন্তু জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না। আমি নির্বাচন করবই।’ জানা গেছে, সারা দেশে অর্ধশতাধিক পৌরসভায় বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের মনোভাব একই রকম। দলের প্রতীক না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বড় অংশ বিএনপির কোনো অনুরোধও রাখতে রাজি নন। পৌর নির্বাচনে বিএনপি ভুল প্রার্থী পছন্দ করেছে বলেও মন্তব্য অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীর। বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায়, পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বসাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে বিএনপি। দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে বিএনপিতে তাদের বড় কোনো পদে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা চলছে। শিগগিরই এ বার্তা বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের পাঠানো হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতারা এ নিয়ে ওইসব প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলবেন। তবে তাদের ব্যাপারে আপাতত বহিষ্কারের কোনো খড়গ আসবে না বলে জানা গেছে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা দাবি করেছেন, তিন-চারটি পৌরসভা ছাড়া আর কোথাও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নেই। সবাই ‘বিকল্প’ প্রার্থী। কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। কেন্দ্র থেকে অনুরোধ করা হলে ওইসব প্রার্থী সরেও দাঁড়াবেন। তবে এক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থীরা সুবিধাজনক সাংগঠনিক দায়িত্ব পেতে চাইলে তাদের ভালো কোনো স্থানে পদায়ন করা হবে। কেন্দ্র অনেক প্রার্থীকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সংকেতও দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাও বলছেন বলে জানা যায়।

এ প্রসঙ্গে পৌর নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দু-একটি বাদে বিএনপিতে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন, তাদের আমরা সর্বাত্মক বোঝানোর চেষ্টা করব। আশা করি, দলের কথা মাথায় রেখে তারা ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবে।’ পদধারী কোনো নেতা নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে বহিষ্কার করা হবে কি-না এমন প্রশ্নে মো. শাহজাহান বলেন, ‘বহিষ্কার কোনো সমাধান নয়। আশা করি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে অনুরোধে সাড়া দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। মোটামুটিভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি ৮০ ভাগেরও বেশি পৌরসভায় বিজয়ী হবে বলেও আমরা আশা করছি। এ জন্য ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয়তাবাদী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধও করা হচ্ছে।’ জানা যায়, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বিএনপির কেন্দ্র থেকে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি পাঠানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তৃণমূলে এ চিঠি পাঠানো হবে। পৌর নির্বাচনসহ চলমান সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে দলের নেতা-কর্মীদের জন্য বিশেষ বার্তাও দেবেন বিএনপি প্রধান। প্রয়োজনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বেগম জিয়া নিজেও কথা বলবেন বলে জানা যায়। রাজশাহীর তানোর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হাসানাত মোখলেসুর রহমান ফিরোজ সরকার। বর্তমান এ মেয়র পৌর বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদকও। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমি এখন দলের কোনো পদে নেই। তাই দলও আমাকে কোনো অনুরোধ করতে পারে না। নির্বাচনে আমি লড়ে যাব।’ পাবনা সদর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুল হাসান মিন্টু। পাবনা বিএনপি রক্ষা কমিটির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আমার পাশে রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়েই চিন্তা করছি।’ জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী বাদশাহ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিএনপির কোনো অনুরোধও না রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। একইভাবে কালাইয়ে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আনিসুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘আমাকে বলা হচ্ছে দলের কেউ না। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত আমি লড়াই করে যেতে চাই। কার কত জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে চাই।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে অপেক্ষা করব। তাদের সঙ্গে আমাদের কথাও বলতে হবে। যারা দলীয় প্রতীক পাননি, তাদের সংগঠনের ভালো কোনো জায়গায় পদায়ন করা যায় কি-না, সে ব্যাপারেও হয়তো চিন্তাভাবনা করা হবে। তবে আশাবাদী বিএনপিতে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে না।’

সর্বশেষ খবর