সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পৌরসভায় ভোটের হাওয়া

শঙ্কা-আশঙ্কা উৎকণ্ঠা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে

গোলাম রাব্বানী

পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিশেষ করে বিএনপিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি উৎকণ্ঠায়। ভোটারদের মধ্যেও ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে নানা ভয়-ভীতি কাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারে দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচন হওয়ায় নির্দলীয় প্রার্থীরা বেশি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীদের ক্যাডার বাহিনী এরই মধ্যে অনেক প্রার্থীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। দলীয় প্রার্থীদের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সমান সুযোগ পাবেন কিনা- তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষও ঘটতে শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় ২৩৪ পৌরসভার অনেক প্রার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় সব প্রার্থীর নিরাপত্তা দিতে ইসিকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। নির্বাচনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরাও। তারা বলছেন, বর্তমানে একটি অস্থির সময় যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তাই নির্বাচন কমিশন বা ইসি যদি কঠোর না হয় তাহলে আসন্ন পৌর নির্বাচন অস্থির সময়কে আরও বেশি অস্থির করবে। পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে বর্তমানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরাও। তারাও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করে তাহলে মাঠ গরম হয়ে যাবে, নির্বাচনের সময় মানুষ অস্থির হবে এবং সহিংসতা বেড়ে যাবে। অনেক সময়ই নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসন নানানভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকে, এবারও যদি তেমন হয়- তখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এমন ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যদি প্রতিটি ঘটনায় কঠোর হয়, তাহলেই আর শঙ্কা থাকে না। কিন্তু কঠোর না হলে সব আয়োজনই ভণ্ডুল হয়ে যাবে বলে তারা মনে করছেন। এদিকে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তারাব পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিনের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। ইসিতে এ অভিযোগও এসেছে। এ ছাড়া গতকালও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভা নির্বাচনে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন না করার জেরে সন্ত্রাসীরা পিতা ও পুত্রকে কুপিয়েছে এবং ছুরিকাঘাত করে ভুঁড়ি বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই পৌরসভা এলাকায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিএনপির দুই গ্রুপে সংষর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুরের মতলব ও চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপসহ শতাধিক পৌরসভায় প্রার্থীরা আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন বলে জানা গেছে। অনেক প্রার্থী রাতে বাড়িতেও থাকতে পারছেন না। আগামী ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য অনেককেই ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, মাঠপর্যায়ের বর্তমান অস্থিরতা যতটা কমানো যায় ততটাই ভালো। অস্থিতিশীলতা কমিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে নির্বাচন কমিশনকে কঠোরভাবে তাদের আইন প্রণয়ন করতে হবে। আর এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলো যতটা স্থিতিশীল আচরণ করবে ততটাই দেশের জন্য ভালো। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও ইসিতে কোনো অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেব। কোনো কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ইসির নির্দেশনা না মানলে বা মাঠপর্যায়ে কাজে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর