মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে লড়াই প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের

শাবান মাহমুদ

পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে পৌর নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করার জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই দলের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। দলের শীর্ষমহল থেকেও এমনই আভাস দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের নেতাদের। হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রের শীর্ষনেতারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন নির্বাচন পরিস্থিতি। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে দলীয় প্রার্থীদের জয় সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতারা নিয়মিত বসছেন দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে। দেশের ২৩৪টি পৌর নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দলের পক্ষ থেকে গঠন করা হচ্ছে হাইপ্রোফাইল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটি। কমিটিতে একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্যের সমন্বয়ে এমপি নন এমন প্রভাবশালী একাধিক নেতার ঠাঁই হবে। নির্বাচন আচরণ বিধির কথা মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। এ ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ দলের একাধিক সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও গঠন করা হচ্ছে পৃথক পৃথক কমিটি। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এসব কমিটি সারা দেশে নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সাংগঠনিক সফর করবেন জেলায় জেলায়। দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে অংশ নেবেন নির্বাচনী প্রচারণায়। পৌর নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গতকাল যুবলীগের কেন্দ্র থেকে সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদকে সদস্য সচিব করে মোট ২৫টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিন সারা দেশের নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরাও নিজ নিজ বিভাগের সম্ভাব্য জরিপ নিয়ে কাজ করছেন। যেখানেই সাংগঠনিক জটিলতা কিংবা বিদ্রোহের সুর সেখানেই সতর্ক করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট তৃণমূল নেতাদের। প্রতিদিনের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করা হচ্ছে দলের সভানেত্রীকে। পৌর মেয়র পদে দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে কেন্দ্র থেকে পাঠানো হচ্ছে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থী সরিয়ে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনেকটা সফলও হয়েছেন। প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ সময়সীমা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করবেন। আগামী ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ দিন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, আমরা প্রত্যাশা করছি সারা দেশে সব কয়টি পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকবে। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক শুরু করেছেন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ পর্যন্ত ৮টি গুরুত্বপূর্ণ পৌর এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সম্মত করে একক প্রার্থী নিশ্চিত সম্ভব হয়েছে কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদকদের যৌথ প্রচেষ্টায়। বিদ্রোহী প্রার্থী প্রশ্নে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পৌর নির্বাচনে দলের জয় সুনিশ্চিত করতে প্রায় প্রতিদিনই দলের ধানমন্ডির কার্যালয়ে বসছেন কেন্দ্রের সিনিয়র নেতারা। নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক হচ্ছে নিয়মিত। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, ডা. দীপু মনি এমপি, ড. হাছান মাহমুদ এমপি, এনামুল হক শামীমসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা কেন্দ্র থেকে বিশেষভাবে কাজ করছেন নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যালোচনায়।  দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমেদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে ছুটছেন বিভিন্ন এলাকায়।  সূত্রমতে, নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটি সফর শুরু করবেন বিভিন্ন জেলায়। নির্বাচন পরিচালনায় দিকনির্দেশনা দেবেন তৃণমূল নেতাদের। বসবেন স্থানীয় দলীয় নেতাদের সঙ্গে। কোনো জায়গায় কোন্দল থাকলে তা মেটাতে উদ্যোগ নেবেন। দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে নির্দেশনা দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একইভাবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতারাও ঘুরবেন জেলায় জেলায়। পৌর নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত থাকতে চায়। এ লক্ষ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই পৌর নির্বাচন সম্পন্ন করতে সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দিতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। সূত্রমতে, কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে দল তাদের মূল্যায়ন করবে অন্যভাবে। এমন তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।

সর্বশেষ খবর