শিরোনাম
বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিধি লঙ্ঘনে শীর্ষে এমপিরা

গোলাম রাব্বানী

বিধি লঙ্ঘনে শীর্ষে এমপিরা

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে এমপিদের মাঠের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ উঠেছে সাতজন এমপির বিরুদ্ধে। আরও ১৫ জন এমপি তাদের আত্নীয়স্বজন ও মনোনীত দলীয় মেয়র প্রার্থীদের জয়ী করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন কমিশন আরও বিপাকে পড়বে।  এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানও ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এ কারণে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অনেক প্রার্থী। এ ছাড়া বিভিন্ন পৌরসভায় রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তারা নিজেই প্রার্থীর হলফনামার তথ্য ভুল করে দিয়ে টাকার বিনিময়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। অন্যদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গত রবিবার তিনজন এমপিকে শোকজ করেছে। আরও চার এমপিকে শোকজ করার ফাইল তৈরি করা হচ্ছে। ইসি সচিবালয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী এসব এমপিকে শোকজ করছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শীর্ষে থাকা এমপিদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মালেক, নাটোর-২ আসনের মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল, বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমন, ফরিদপুর-১ আসনের আবদুর রহমান, সিরাজগঞ্জের হাসিবুর রহমান স্বপন, হবিগঞ্জের অ্যাডভোকেট আবু জাহির ও শরীয়তপুরের নাহিম রাজ্জাক। কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ক্লিপিং দেখে আরও কয়েকজন সংসদ সদস্যের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সচিত্র তথ্য রয়েছে কমিশন সচিবালয়ে।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে মনোনয়নপত্র জমা দান ও নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ মেয়র প্রার্থীর পক্ষে বিধি লঙ্ঘন করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।  নির্বাচনী কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কর্মিসভা করারও অভিযোগ রয়েছে ইসিতে। এ ছাড়া নিজ মেয়র প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে অনেক এমপির বিরুদ্ধে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ও নির্বাচনী প্রচারণায় যেসব সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় গেছেন এবং প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে যাদের শোকজ করা হয়েছে তারা হলেন- ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মালেক, নাটোর-২ আসনের মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল ও বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমন। এ তিনজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত থাকা, আগাম প্রচারণা চালানো ও নির্বাচনী কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ তিনজনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বিধি মোতাবেক কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানাতে চিঠি প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা-মধুখালী-বোয়ালমারী) আসনের এমপি আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে জেলার বোয়ালমারী পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কৌশলে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তিনি সোমবার বিকালে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌরসভার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে সভা করেছেন। জানা গেছে, ময়না ইউনিয়নের ঠাকুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এমপি আবদুর রহমান উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষকদের নিয়ে অনির্ধারিত সভাও করেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। সভায় উপস্থিত অধিকাংশ শিক্ষকই নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছে ইসি। গত রবিবার রাত ৮টার দিকে সদরের একটি ক্লিনিকে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে নির্বাচনী বিষয় নিয়ে আলোচনা করা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে এ পৌরসভায় দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করারও অভিযোগ উঠেছে এই এমপির বিরুদ্ধে।

ইসির নোটিস পেয়েও আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই চলছেন বরগুনার এমপি। বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে আবারও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার বিকালে পাথরঘাটায় দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কর্মিসভা করেন তিনি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে ইসিতে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী। আওয়ামী লীগের এই এমপি এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেতাগী পৌরসভায় দলীয় মেয়র প্রার্থী এ বি এম গোলাম কবিরের মনোনয়নপত্রের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে হেলিকপ্টারে বেতাগীতে যান। এ ঘটনায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেয় নির্বাচন কমিশন।

এমপিদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেছেন, ইতিমধ্যে অনেক এমপি প্রচারণার চেষ্টা করছেন বলে খবর পাচ্ছি, এলাকায় যাচ্ছেন। আপনারা আইন প্রণেতা, আপনারা আইন ভাঙবেন না। এমন কিছু করবেন না যাতে আমরা অপ্রস্তুত ও বিব্রত অবস্থায় পড়ি। তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। এদিকে পৌরসভা নির্বাচনে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যাতে প্রচারণায় অংশ না নেন, সেই বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে পৃথক দুটি চিঠি দিয়েছে কমিশন। এর পরেও একের পর এক সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই যাচ্ছেন। পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী- সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, উল্লিখিত ব্যক্তিরা নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তার ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারবেন। আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হলেন- প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়র বোঝানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর