বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিজামীর চূড়ান্ত রায় ৬ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজামীর চূড়ান্ত রায় ৬ জানুয়ারি

মুক্তিযুদ্ধের সময় দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে ৬ জানুয়ারি। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষে গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। বেঞ্চের অন্য বিচারকরা হচ্ছেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের জবাবে আসামি পক্ষে যুক্তিখণ্ডন করেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে ১১তম কার্যদিবসে শেষ হলো আপিল শুনানি। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তথা মৃত্যুদণ্ড না হলে হতাশ হবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে দেওয়া হয়েছে, তাতে মতিউর রহমান নিজামী খালাস পাবেন বলে আশা করেছেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। গতকাল নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িত না থাকলেও উসকানির দায়ে নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। তিনি বলেন, তৎকালীন দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত মতিউর রহমান নিজামীর লেখায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বদর বাহিনী হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। এ ছাড়া এ মামলায় সরাসরি জড়িত থাকার প্রয়োজন নাই। বরং পরিকল্পনা, উসকানি দিলেও সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যাবে। মাহবুবে আলম বলেন, ১৯৭১-এর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় নিজামী দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় একটা লেখায় তিনি বলেন, শত্রুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়। হিন্দুস্তান থেকে দেশ রক্ষা করতে হবে। মাহবুবে আলম আরও বলেন, নিজামী ১৯৭১ সালে নভেম্বর মাসে ছাত্রসংঘের দায়িত্বে ছিলেন না। কিন্তু তিনি আলবদর বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। বুদ্ধিজীবী হত্যায় নিজামীর অধীন মুজাহিদ-কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে। লিডার বা নেতা হিসেবে যদি নিজামীর ফাঁসি না হয়, সারা দেশের মানুষ হতাশ হবে। তাই আমি মনে করি, বদর বাহিনীর নেতা নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। তবে নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। আপিলের শুনানি শেষে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন খন্দকার মাহবুব। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় যারা প্রধান আসামি ছিলেন, তাদের বিচার হচ্ছে না। যারা তাদের সহযোগী ছিলেন বা সমর্থন করেছেন, তাদের বিচার করা হচ্ছে। মতিউর রহমান নিজামী ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না। আপিল বিভাগে আশা করি তিনি ন্যায়বিচার পাবেন। নিজামীর এ আইনজীবী বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও সাক্ষীদের বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে। আমরা আদালতকে বলেছি, আদালত যদি প্রসিকিউশনের বক্তব্য বিশ্বাসও করে, তাহলেও তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যাবে না। আমরা আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ঘাতক সংগঠন আলবদর বাহিনীর প্রধান, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুট ও দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ এ দণ্ড দেন আদালত। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১৬টির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয় আটটি অভিযোগ। প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি আটটি অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। আপিলে নিজামীর খালাস চাওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর