বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চিরদিনের জন্য নীরব হয়ে গেল শিশুটি

ম্যানহোলে পড়ার চার ঘণ্টা পর লাশ মিলল বুড়িগঙ্গা তীরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিরদিনের জন্য নীরব হয়ে গেল শিশুটি

শিশু নীরবকে উদ্ধারে গতকাল ম্যানহোলে অভিযান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানী শ্যামপুরের পালপাড়ায় ইসমাইল হোসেন নীরব নামে ছয় বছরের এক শিশু স্যুয়ারেজ লাইনের ভিতরে পড়ে মারা গেছে। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে খেলতে গিয়ে নীরব ঢাকনা বিহীন এই ম্যানহোলে পড়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাদের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। পড়ে যাওয়ার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর স্লুইচ গেট থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় অচেতন অবস্থায়। জানা গেছে, নীরবের বাবার নাম রেজাউল ইসলাম। তিনি আরএফএল প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার পর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা স্যুয়ারেজ লাইনে নেমে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু স্যুয়ারেজ লাইনে প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত দূষিত পানির কারণে উদ্ধার কাজে কিছুটা বেগ পেতে হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। আশপাশের উৎসুক জনতা উদ্ধার কাজ দেখার জন্য সেখানে ভিড় জমালে তাদের সরাতে সেখানে অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্যুয়ারেজের লাইনের উপরের ম্যানহোলটির ঢাকনা ছিল না। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে খাবারের পর শিশু নীরবসহ বেশ কয়েকজন শ্যামপুর ইউনিয়নের পালপাড়া জাগরণী ক্লাবের সামনে খেলতে যায়। তাদের কেউ চরকায় চড়ে, কেউবা চরকার আশপাশে খেলছিল। বিকাল ৪টার দিকে চরকার পাশেই শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্যরে স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনা না থাকায় পা ফসকে পড়ে যায় নীরব। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশসহ ফায়ার সার্ভিসে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করে।

শিশুটি যে স্থানে পড়ে গেছে ওই স্যুয়ারেজ লাইনটি বুড়িগঙ্গার যেস্থানে মিলিত হয়েছে সে স্থানটিতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল রয়েছেন। সন্ধ্যার আগ থেকেই লাইটের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করে শিশুটিকে খোঁজা হচ্ছে। স্যুয়ারেজ লাইনটি অনেক বড় এবং এর ভিতরে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। স্যুয়ারেজ লাইন কেটে কেটে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করা হয়। প্রচণ্ড স্রোতের কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেলওয়ে মাঠসংলগ্ন পানির পাম্পের ৩০০ ফুট গভীর একটি পাইপের ভিতরে জিহাদ নামে চার বছরের এক শিশু পড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে শিশু জিহাদকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত তার নিথর দেহ তুলে আনেন একদল স্বেচ্ছাসেবী।

সর্বশেষ খবর