শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেশ থেকে পাচার চার লাখ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশ থেকে পাচার চার লাখ কোটি টাকা

 

গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি পাচার করা হয়েছে। ফলে অর্থ পাচারকারী দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে উঠে এসেছে ভারত ও বাংলাদেশের নাম। আর বিশ্বের অর্থ পাচারকারী ১৫০টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ২৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। যা জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ। আর গত এক দশকে পাচার করা হয়েছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। অর্থপাচার নিয়ে জরিপকারী ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) তাদের প্রকাশিত বার্ষিক-২০১৩ প্রতিবেদনে এ তথ্য উলে­খ করেছে। জরিপের এ প্রতিবেদনটি গতকাল ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।

জরিপের তথ্যমতে, অর্থ পাচারকারী দেশের শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপর রাশিয়া, মেক্সিকো। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। আর পঞ্চম অবস্থানে মালয়েশিয়া। অর্থ পাচারকারী শীর্ষ ২০ দেশের ২০তম অবস্থানে রয়েছে পোল্যান্ডের নাম। আর বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে ২৬তম অবস্থানে। এর আগে গত বছর ১৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৭তম। এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ৮৬তম, শ্রীলঙ্কা ৫৩তম, পাকিস্তান ১০৯তম এবং ভুটানের নাম রয়েছে ১৩২তম অবস্থানে। জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়নশীল ও দরিদ্র অর্থনীতির দেশগুলো থেকে ২০১৩ সালে পাচার হয়েছে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে অর্থপাচারের পরিমাণ নাটকীয় মাত্রায় বেড়ে গেছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকায় অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ব্যবসায়িক কারণে অতি মুনাফার লোভে ওভার ইনভয়েস করেও প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার করছেন অসৎ ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে দেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে মুদ্রা পাচার অনেকাংশে কমে আসবে। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা। জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ১৭৮ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০১১ সালে পাচার হয়েছিল ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ৪ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। আর ২০১৩ সালে পাচার করা হয়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। জিএফআইয়ের রিপোর্টের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের মধ্যে বেশির ভাগই থাকে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। আইএমএফের কাছে প্রত্যেক দেশের পাঠানো আমদানি রপ্তানির ডাটা বিশ্লেষণ করে যে গড়মিল পাওয়া যায় তা থেকেই এ পাচারের তথ্য প্রাক্কলন করা হয়। জিএফআইয়ের হিসাবে, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ২০১৩ সালে উন্নয়নশীল ১৫০টি দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে ৫৬ বিলিয়ন ডলার। জিএফআই বলছে, দুর্নীতি পরায়ন সরকারি কর্মকর্তা, অপরাধী এবং কর ফাঁকিবাজরা বিদেশে সম্পদ স্থানান্তর করার জন্য অর্থ পাচার করে থাকে। করের স্বর্গ বলে পরিচিত দেশে, বেনামি কোম্পানিতে বিনিয়োগ এবং গোপন ব্যাংক হিসাবে রাখার জন্য অর্থ পাচার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মতে, তাদের এই প্রাক্কলন অত্যন্ত রক্ষণশীল। কেননা এতে সেবা খাতের লেনদেন, অপরাধ সংগঠনের জন্য নগদ লেনদেনের মতো ডাটা থাকে না।

আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক দেশের ডাটার মধ্যে গরমিল এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ডাটার অসামঞ্জস্যতা থেকে তারা এ   হিসাব করে। ফলে প্রকৃতপক্ষে তাদের হিসাবের চেয়ে বেশি অঙ্কের টাকা পাচার হয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর