বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিদ্রোহীদের ২৪ ঘণ্টা দিল আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

বিদ্রোহীদের ২৪ ঘণ্টা দিল আওয়ামী লীগ

 

বিদ্রোহীদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই এমপি-মন্ত্রী হওয়ায় তারা মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন না আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনে। বিধিনিষেধ আরোপের পর প্রচার-প্রচারণায় এমপিদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন কমিশন। মূলত এ জন্যই দলীয়  মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় ব্যাকফুটে থাকবে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সরাসরি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকায় বাড়তি চাপের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। তবে দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, পৌর নির্বাচনে পিছিয়ে থাকতে চান না তারা। প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণার জন্য এমপি-মন্ত্রী নন এমন কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ক করে সাত বিভাগে টিম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল কিংবা পরশু সমন্বয়কদের নিয়ে বৈঠকে কমিটি গঠন করা হবে। এরপর ১৪ তারিখ থেকে সারা দেশে দলীয় মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে ঢাকা ছাড়বেন তারা। গণসংযোগে তৃণমূলের ভোটারদের কাছে তুলে ধরবেন বর্তমান সরকারের সাত বছরের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সাফল্য। চাইবেন দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট। দলীয় সূত্র মতে, আগামী ১৪ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতীক পাওয়ার আগে অর্থাৎ ১৩ ডিসেম্বর যেসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন তাদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সকাল-সন্ধ্যা দলীয় সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে বসে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ফোন করছেন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারক মনে করেন, দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে এমপিদের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। কারণ দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই এমপি ও মন্ত্রী। এতে করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে না। কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে স্ব-স্ব পৌরসভা এলাকায় ভোটে একটি ইতিবাচক সাড়া মিলত। যারা মনোনয়ন না পেয়ে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন, তাদের সক্রিয়ভাবে মাঠে নামানো যেত। তবে এমপি-মন্ত্রীরা মাঠে নামতে না পারলেও মূল দলের নেতাদের পাশাপাশি মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো এবং ১৪ দলের শরিকরা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নামবেন। এ জন্য দু-একদিনের মধ্যে বৈঠক করে দায়িত্ব বণ্টন করা হবে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচন হলেও এতে প্রচারণায় মন্ত্রী-এমপিদের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক বলে মনে হয়নি। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে, তাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য প্রচারণায় এমপিদের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য আমাদের ২৫টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে এ প্রচারণা টিমকে সমন্বয় করতে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করতেও একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিদ্রোহীদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম আওয়ামী লীগের : পৌর নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের এবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছে দলটি। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে কোনো মন্ত্রী, এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না দলটি। গতকাল রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আলটিমেটামের চিঠি গতকালই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পৌর নির্বাচন বানচালে খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্র করতে পারেন। এ জন্য নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে অংশ নেওয়া আরেকজন নেতা বলেন, এখনো কিছু পৌরসভায় মন্ত্রী-এমপিদের মদদে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন না। এ বিষয়ে অঘোষিত সিদ্ধান্ত হয়, দলের যত বড় নেতাই হোক শৃঙ্খলাবিরোধীদের পক্ষে কেউ অবস্থান নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ। বৈঠকের পরপরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপি ও জেলা নেতাদের কেন্দ্রের অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন জানিয়ে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এখনো যারা রয়েছেন, আমরা চিঠি দিচ্ছি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য। এর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন চ‚ড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হবে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের অপর দুই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর