বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশ খালেদার

মাহমুদ আজহার

আন্দোলনের ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নেওয়া আসন্ন পৌর নির্বাচনে ১৩ ডিসেম্বরের পর প্রচারণায় মাঠে নামছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সর্বাত্নক চেষ্টা চালাবেন তারা। এ নিয়ে গতকাল গুলশান কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের ডেকে ‘বিশেষ বার্তা’ প্রদান করেন। আজ দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পৌর নির্বাচনে ফলাফল পর্যন্ত টিকে থাকার সব কৌশল নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে টিম গঠনসহ প্রচারণার নানা দিক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে জোটের শরিক জামায়াতের মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে গতকালের বৈঠক সূত্র জানায়, মেয়র প্রার্থী নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সমঝোতায় আসতে চায় না জামায়াত। স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে সমঝোতা চায় নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া এ দলটি। এ কারণে জনপ্রিয়তার দিক বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে জামায়াতকে কয়েকটি পৌরসভা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কোন কোন পৌরসভায় জামায়াতকে ছাড় দেওয়া যায়, তা নিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ ১০টিতে ছাড় দিতে পারে বিএনপি। এদিকে ১২ পৌরসভায় বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই বলে জানা গেছে। ওই সব পৌরসভায় ‘স্বতন্ত্র’ অন্য কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে তাকে দলীয় সমর্থন দেওয়ার কথাও আলোচনা হচ্ছে।

জানা যায়, ১৩ ডিসেম্বরের পর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে দলীয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের দলীয় প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে সামগ্রিক যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসানোর ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব নিতেও বলা হয়। দলের সাংগঠনিক পদ দেওয়াসহ যাকে যেভাবে বোঝানো যায়, সব চেষ্টাই করবেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। কোনো কারণে তারা ব্যর্থ হলে এ নিয়ে যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, সর্বশেষ দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর বিএনপির ২৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে পৌরসভা নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারাও সম্পৃক্ত হবেন। এ নিয়ে টিমও গঠন করা হতে পারে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ টিম গঠন করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন প্রচারণায় মাঠে নামবেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা বলার সময় এখনো আসেনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা স্থানীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণায় খালেদা জিয়ার মাঠে নামার সম্ভাবনা খুবই কম। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, শারীরিক অবস্থাসহ নানা কারণে তিনি মাঠ প্রচারণায় নাও যেতে পারেন। তবে সব ঠিকঠাক থাকলে বিভাগীয় পর্যায়ে বেগম জিয়ার সমাবেশ করাও চিন্তাভাবনা চলছে। পৌরসভার বাইরে থাকায় এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনেরও কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না বলেও মনে করছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন তিনি। ভোটের ফলাফল পর্যন্ত মাঠে থেকে নির্বাচনে জেতার নানা কর্মকৌশল নিয়েও কথা বলছেন। দলের দায়িত্বশীল আরেক নেতা জানান, মাঠপর্যায়ে প্রচারণা কমিটির পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবেও আলাদা টিম গঠন করা হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ইতিমধ্যেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়।  সোমবার তারা নানা অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যান। সেখানে দলের প্রার্থীদের নানা অভিযোগ কমিশনকে অবহিত করেন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকা থেকে অভিযোগ নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনও করা হবে। দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনকে প্রধান করে এ নিয়েও পৃথক কমিটি গঠন করা হবে। সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে কেন্দ্র ও জেলার সমন্বয়ে বৃহত্তর ১৯টি জেলায় কমিটি করা হতে পারে। আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

জানা যায়, সর্বশেষ তিনটি সিটি নির্বাচন বয়কট করলেও এবার ভোটের ফলাফল পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকতে চায় বিএনপি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বেগম জিয়া একাধিকবার এ কথাই বলেছেন। তবে পরিস্থিতি বাধ্য করলে একযোগে নির্বাচন বর্জনও করতে পারে দলটি। অবশ্য নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকার চিন্তা মাথায় নিয়ে এগোচ্ছেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। বিগত সিটির সময়ের মতো নির্বাচন বর্জন করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল  মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের জানান, ‘এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল। কে কখন বর্জন করবে, অর্জন করবে, দ্য উইল ডিপেন্ড অন দ্যা সারকোমোসটেন্সেস।’

সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা : বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের কেন্দ্র থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের যে কোনো উপায়ে বুঝিয়ে তাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেসব পৌরসভায় সমস্যা হবে, তাৎক্ষণিকভাবে তা কেন্দ্রকে জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংকট সমাধানে কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি আশা করছে, দলের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা বসে যাবে। অন্যথায় ১৩ ডিসেম্বরের পর কোনো কোনো প্রার্থীর ওপর বহিষ্কারের খড়গও আসতে পারে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল এসব নির্দেশনা দেন। বৈঠকে যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সহসম্পাদক আসলাম চৌধুরী, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সহসম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সহপ্রচার সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর