বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চার মামলায় বিচার চলছে ১৮ জনের

আহমেদ আল আমীন

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলায় এখন ১৮ জনের বিচার চলছে। এর মধ্যে জামালপুরের একটি মামলায় আসামির সংখ্যা সর্বোচ্চ আটজন। এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। নেত্রকোনার একটি মামলায় সর্বনিম্ন দুজনের বিচার চলছে। এ মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এটির কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে। এর বাইরে এ মাসের শেষ দিকে আরও একটি মামলায় অভিযোগ গঠন হতে পারে। এ ছাড়া কয়েকটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলছে।

 ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, তদন্তকালে আমরা দেখেছি, এসব মামলার আসামিরা একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণসহ ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন। সেভাবেই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা আশা করি, মামলাগুলোতে প্রসিকিউশনের অভিযোগ প্রমাণের মাধ্যমে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, আরও কয়েকটি মামলা অভিযোগ গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে নেত্রকোনার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে দায়ের মামলা। এ মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৪ জানুয়ারি আসামিপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলা পরিচালনাকারী প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী বলেন, তাহের ও ননীর এ মামলাটিতে আসামিপক্ষ যদি সাক্ষী হাজির করতে না পারে সেক্ষেত্রে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিকে যাবে। এ মামলায় আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারব বলে আশা করি। শেষ পর্যন্ত আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তিই চাইব। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ২৬ অক্টোবর একটি মামলায় জামালপুরের আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য দিয়ে ওই মামলার আসামিদের বিচার শুরু হয়। মামলায় আট আসামি হলেন- শামছুল হক, এস এম ইউসুফ আলী, মো. আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ, মো. আবদুল মান্নান, মো. আবদুল বারি, মো. হারুন ও মো. আবুল কাসেম। তাদের মধ্যে শামসুল হক ও এস এম ইউসুফ আলী আটক আছেন। অন্যরা পলাতক। এর আগে ১২ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের পাঁচজনের বিচার শুরু হয়। এ মামলায় বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠন করেন। মামলার আসামিরা হলেন- শামসুদ্দিন আহমেদ, মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। তাদের মধ্যে শামসুদ্দিন গ্রেফতার হয়েছেন। অন্যরা পলাতক। অভিযোগ গঠনের জবাবে শামসুদ্দিন নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের দুই সহোদর ও তাদের এক চাচাত ভাইয়ের বিচার শুরু হয়। এ মামলার তিন আসামি হলেন বানিয়াচং উপজেলার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাত ভাই আবদুর রাজ্জাক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চারটি ঘটনায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়। এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা বলেন, আমরা তিন আসামির পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য প্রায় ৬০ জনের নাম ট্রাইব্যুনালে দিয়েছি। ট্রাইব্যুনাল যত জনকে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য অনুমোদন করবেন সেই অনুযায়ী আমরা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হাজির করব। আশা করি তিনজনকেই আমরা নির্দোষ প্রমাণ করতে পারব। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর শেখ মুশফিক কবির জানান, মৌলভীবাজারের চার রাজাকার মো. আকমল আলী তালুকদার, আবদুন নূর তালুকদার, আনিস মিয়া ও আবদুল মোছব্বের মিয়ার বিরুদ্ধে আজ ১০ ডিসেম্বর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরকারের বিরুদ্ধে ২৩ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের রিয়াজউদ্দিন ফকির ও ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আগামী ৪ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর