শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাইকে ঘোষণা দিয়ে আট ‘ডাকাত’ পিটিয়ে হত্যা

রোমান চৌধুরী সুমন ও মজিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ

মাইকে ঘোষণা দিয়ে আট ‘ডাকাত’ পিটিয়ে হত্যা

গণপিটুনিতে নিহত ডাকাতের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ঘেরাও করে ডাকাত সন্দেহে আটজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত চারজন। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পুরিন্দা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো— নোয়াখালীর রাজিব ওরফে রনি (৩০), ময়মনসিংহ কোতোয়ালির রুবেল (২৫), জুয়েল (৩৫), টিটু (৩০), শওকত (৩০) ও সজীব (৩৫)। নিহত অন্য তিনজনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় চার ডাকাতকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে গ্রামবাসী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে একদল লোক একটি মালবাহী ট্রাক নিয়ে পুরিন্দা বাজারে আসে। নৈশপ্রহরীদের তারা বলে, ভাই ভাই দোকানের চাল এসেছে, তাদের সাহায্য করতে হবে। এর পর তারা ধারালো অস্ত্রের মুখে বাজারের নিরাপত্তা-প্রহরী জামান ও মোতালেবের হাত-পা-মুখ মাফলার ও রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরে তারা এম এ গফুর ভূঁইয়ার ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ নামে চালের আড়তের তালা ভাঙে। আড়ত থেকে তারা ট্রাকে চাল তুলতে থাকে। একপর্যায়ে জামান কৌশলে তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে সক্ষম হন। তিনি পালিয়ে গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে ডাকাতির খবর দেন। পুরিন্দা বাজার জামে মসজিদের মাইকে এ তথ্য ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা শুনে মুহূর্তের মধ্যে শত শত গ্রামবাসী বাঁশ, টেঁটা, জুইত্যা, শাবল ও কোরবানির গরু কাটার রামদা নিয়ে বেরিয়ে আসে। উত্তেজিত গ্রামবাসী প্রথমে ডাকাতদের আত্মসমর্পণ করতে বললেও ডাকাত দল পালানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে গ্রামবাসী চারদিক থেকে বাজারের ভিতর থাকা ডাকাতদের ঘিরে ফেলে। তারা ডাকাতদের ঘেরাও এবং ধাওয়া করে পিটুনি দেয়। নৈশপ্রহরী মোতালেব বলেন, ‘আমার লগের গার্ড ছুইট্টা গিয়া জনগণরে খবর দিছে। হেরাই আমারে পরে ছুটাইছে।’ ডাকাতরা ততক্ষণে প্রায় দেড়শ বস্তা চাল ট্রাকে তুলে ফেলেছিল বলে জানান তিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরিন্দা বাজারটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। বাজারে কয়েকশ দোকান আছে। ওই আড়তের পাশেই কাচভাঙা অবস্থায় অর্ধেক বোঝাই ট্রাকটি দাঁড় করিয়ে রাখা অবস্থায় দেখা যায়। ডাকাতি ও গণপিটুনির খবর পেয়ে সকালে আশপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ ওই আড়ত ও আশপাশে ভিড় করে। আহতদের মধ্যে ডাকাত লোকমান জানান, তারা ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় সংঘবদ্ধ হয়। আড়াইহাজারের পুরিন্দা বাজারের হাজী আবদুল গফুরের চালের গোডাউন লুট করার পরিকল্পনা করে রাজধানীর তেজগাঁও থেকে একটি ট্রাক ভাড়া করে এখানে ডাকাতি করতে আসে। আটক ডাকাত লোকমান চাঁদপুর সদর থানার নানিয়াপুরা গ্রামের ওসমান বেপারির ছেলে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আহত অবস্থায় আটক ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছে, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্য। তাদের দলে অন্তত ২৫ জন ছিল। তাদের দলনেতার বাড়ি ময়মনসিংহ অঞ্চলে। গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলে সাতজন এবং হাসপাতালে আরেকজন মারা যায়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। পুলিশ প্রহরায় তাদের হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। আরেকজনকে থানায় রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজন ডাকাতদের ব্যবহার করা ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪৩১১) জব্দ করা হয়েছে। ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল গফুর বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমারে ফোন দিয়া কইল দোকানের তালা ভাইঙ্গা ডাকাতি হইতেছে। আমি নামাজ পইড়া আইসা দেখি এই অবস্থা।’

ওরা ডাকাত নয় : আড়াইহাজারে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ৮ জনের মধ্যে রুবেল (২৫) ও শওকাতের (৩২) বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মধ্যবাড়েরা গ্রামে। এলাকার লোকজন দাবি করছেন, ডাকাত সন্দেহে ওদের নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও তারা মূলত ডাকাত নন। এছাড়া গণপিটুনিতে আহত সজিবের বড় ভাই জাহিদুল ইসলামও দাবি করেছেন, তার ভাই ডাকাত নয়। তিনি হত্যাকান্ডেরও বিচার দাবি করেন।

সর্বশেষ খবর