শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অর্থ পাচার ক্ষতিকর অর্থনীতির জন্য

জিন্নাতুন নূর

অর্থ পাচার ক্ষতিকর অর্থনীতির জন্য

ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে দেশে একদিকে অর্থ পাচারের পরিমাণ কমবে এবং অন্যদিকে বিনিয়োগের হারও বাড়বে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এমনটাই মনে করেন। তিনি অর্থ পাচারকে দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট এক ক্ষতিকর বিষয় বলেও মন্তব্য করেন। তার মতে, দেশ থেকে অর্থ যদি পাচার না হতো তবে তা দেশে বিনিয়োগ হতো। আর এমনটি হলে তা জাতীয় আর্থিক বিকাশ ও উন্নয়নের ভিত্তি তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু অর্থ পাচার রোধ করতে না পারায় বাংলাদেশ সম্ভাব্য উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থ পাচার সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আলাপকালে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২৬তম দেশ। আর এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিছুটা যে ক্ষুণ্ন হচ্ছে তিনি তা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, এটি আমাদের জন্য কোনো নতুন ঘটনা নয়। আর বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও চীন অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। তবে অর্থ পাচারের কারণে গত দুই-তিন বছর দেশের বেসরকারি খাতে কিছুটা স্থবিরতা কাজ করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলত দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নেই। স্বভাবতই বিনিয়োগকারীরা এই উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা থেকে বিদেশে অর্থ পাচার করে দেবেন। এ জন্য অর্থ পাচার রোধে এবং দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার সরকারকে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূরীকরণ, জমি সমস্যার সমাধান, দুর্নীতি এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট দূর করা। এ ছাড়া অর্থ পাচার রোধের আরেকটি উপায় হলো বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে বিশেষ করে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে যে অর্থ পাচার হয় তার প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। আর এখানে যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।    তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দেশের অর্থ পাচার রোধে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দ্বিধা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তারা (সুশীল সমাজ) সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন। যাতে কেউ কালো টাকা উপার্জন না করে। কারণ কালো টাকা উপার্জন করলেই স্বাভাবিকভাবে অর্থ পাচার করার ক্ষেত্র তৈরি হয়। অর্থাত্ টাকা পাচারের একটি উত্স হচ্ছে কালো টাকা। এক্ষেত্রে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে কালো টাকা উপার্জনে নিরুত্সাহিত করতে পারেন। এ ছাড়া জিএফআইর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আরেকটি পথে অর্থ পাচার হচ্ছে আর সেটি হচ্ছে— আমদানি মূল্য বাড়িয়ে দেখানো এবং রপ্তানি মূল্য কমিয়ে দেখানো। দেখা গেল  একজন একটি পণ্য ১০০ টাকায় রপ্তানি করে ৮০ টাকা মূল্য দেখিয়ে বাকি ২০ টাকা বাইরে পাচার করে দিল। আবার আমদানির ক্ষেত্রে ১০০ টাকার পণ্য আমদানি হলে তা ১৫০ টাকা দেখিয়ে ৫০ টাকা জমা রেখে তা পাচার করা হলো। একই সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ দিয়ে যে অন্তত বাংলাদেশের দুই বছরের বাজেট তৈরি করা সম্ভব হতো এ বক্তব্যের সঙ্গে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দ্বিমত পোষণ করেন। তার মতে, পাচারকৃত অর্থের সঙ্গে দুই মেয়াদের বাজেটের অর্থের তুলনা যথার্থ নয়। কারণ এ টাকা যদি বিদেশে থাকত তবে বাংলাদেশ সরকার একে রাজস্ব হিসেবে ব্যবহার করতে পারত না। এ টাকা বেসরকারি খাতে থাকত আর সরকার তা বিনিয়োগে বা ভোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করত। সেখান থেকে একটা অংশ রাজস্ব খাতে আসত। ফলে পাচারকৃত অর্থ সরকারের রাজস্ব হিসেবে ব্যবহূত হতো না। তবে অর্থ পাচারের সঙ্গে কারা জড়িত এমন প্রশ্নে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচারের সঙ্গে আসলে কারা জড়িত তা বলা মুশকিল। এর জন্য দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। তবে সাধারণত যারা উচ্চবিত্ত যাদের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে তারাই বেশি অর্থ পাচার করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে অর্থ পাচার সম্ভব নয় কারণ তাদের বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। আর কী কৌশল অবলম্বন করে অর্থ পাচার করতে হয় তাও সাধারণ মানুষ জানেন না।

সর্বশেষ খবর