শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সিলেট জেলাকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করি

কর্নেল অলি আহমদ, বীরবিক্রম (অব.)

সিলেট জেলাকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করি

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে আমরা ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করি। এরপর মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ৯ মাস জীবনবাজি রেখে অস্ত্র হাতে বীরের মতো লড়াই করে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ছিনিয়ে আনি। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করি। এর দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর সমগ্র সিলেট জেলাকে আমরা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করি। এতে নেতৃত্ব দেন মেজর জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্স। ১৬ ডিসেম্বর সিলেটেই আমরা বিজয় উদযাপন করি।

বিজয়ের পর স্বাভাবিকভাবে আমরা আশা করেছিলাম, বাংলাদেশের যে মুক্তিকামী মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে, ভিনদেশি মানুষের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে, বাংলাদেশের সেই সন্তানেরাই দেশ পরিচালনা করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, ন্যায় বিচার পাবে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা পাবে। দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। সুশাসনের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুসংহত হবে। এ ধরনের বুকভরা আশা নিয়ে দেশের মানুষ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছিল। কখনো ভাবতেও পারেনি-নিজের দেশে পরবাসী হবে।

সিলেট বিজয়ের পর শ্রীমঙ্গল হয়ে মেজর জিয়াউর রহমান তার সেনা দল নিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে পৌঁছেন। এ সময় সেখানে অবস্থান করছিলেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনারা। তিনি ভারতের সেনাবাহিনীকে কুমিল্লা সেনানিবাস খালি করে দেওয়ার অনুরোধ জানান, তারা একটি অংশ খালি করে দেন। এরপর আমরা সেখানে একই রুমে পাশাপাশি অফিসও শুরু করি। জেড ফোর্সের সিলেট বিজয়ের মতো ১৬ ডিসেম্বরের আগেই বিভিন্ন জেলায় পাকসেনারা পরাজয় বরণ করতে থাকে এবং চূড়ান্ত পরাজয় আঁচ করতে পেরে ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে। কারণ তারা (পাকিস্তানি সেনাবাহিনী) মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করাটা নিরাপদ মনে করেনি। এতে তারা বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। একইভাবে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে অতি সম্প্রতি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত অবাঞ্ছিত। এই বিবৃতির ফলে তারা পুনরায় তাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এটাও ১৯৭১ সালের অনরূপ ভুল সিদ্ধান্ত বলেই আমি মনে করি। ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যা নিঃসন্দেহে বর্বরোচিত ও নিন্দনীয়। দেরিতে হলেও তাদের উচিত, বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া। এতে করে মানুষ অতীতের দুঃখ-বেদনা হয়তো ভুলেও যেতে পারে। সে যাই হোক, বাংলাদেশের জনগণ যে বুকভরা আশা নিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা— যা আজ ভূলুণ্ঠিত।

অনুলিখন : আহমদ সেলিম রেজা

সর্বশেষ খবর