মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সম্পর্ক ছিন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের নির্লজ্জ মিথ্যাচারের প্রতিবাদে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল বিকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা থেকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। উপাচার্য বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুহূর্ত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন, ইতিমধ্যে যেসব কর্মসূচি আছে যেমন, পাকিস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক বিনিময়, সমঝোতা স্মারক, সাংস্কৃতিক কর্মতত্পরতা বিনিময়, স্পোর্টর্স কোনো ধরনের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। পাকিস্তান সরকার ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সম্পর্ক স্থগিত করা হলো। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য ড. সহিদ আকতার হোসাইন, ড. নাসরীন আহমদ, অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সহকারী অধ্যাপক নীলিমা আক্তার প্রমুখ। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরা। এই হত্যার সবচেয়ে বড় আঘাত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। অথচ পাকিস্তান সরকার বলেছে ঢাকায় কোনো গণহত্যা হয়নি। এটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের আর্কাইভে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা পাকিস্তানের গণহত্যার প্রমাণ পাই। পাকিস্তানের এই মিথ্যাচারের পর তাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক রাখা অসম্ভব। ড. সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশে একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করে পাকিস্তান প্রথম দফা গণহত্যা চালিয়ে ছিল। এখন মিথ্যাচারের মধ্যদিয়ে পাকিস্তান দ্বিতীয় বার গণহত্যা চালাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মিথ্যার সঙ্গে কোনো আপস করতে পারে না। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, যে পাকিস্তান স্বাধীনতা যুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছিল তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, কূটনৈতিক সম্পর্ক যেন না রাখা হয়। তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তান একটা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। জাতিসংঘ ও সার্কের সনদ অনুযায়ী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তানকে জতিসংঘ ও সার্ক থেকে বহিষ্কার করতে যথাযথ যে প্রক্রিয়া সেটা শুরু করতে হবে। এ সময় মানবতাবিরেধী অপরাধের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন সদস্যকে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি করেন তিনি। ইতিমধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের মরণোত্তর বিচারের আহ্বান জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা শিগগিরই দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা বৈঠকে বসব। আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগী হয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর