মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ছয় মেয়র ৬৪ কাউন্সিলর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ছয় মেয়র ৬৪ কাউন্সিলর

২৩৪ পৌরসভায় মেয়র পদে মোট প্রার্থী ৯২৩ জন। তবে ছয়জনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকছেন ৯১৭ মেয়র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের ৬৫২ ও স্বতন্ত্র ২৭১ জন। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছয় পৌরসভায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এদিকে গতকাল সব পৌরসভায় প্রতীক বরাদ্দের পরে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি প্রতিপালন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তারা মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি না ভাঙার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া রিটার্নিং অফিসারদের প্রতি ১০টি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের হিড়িক পড়েছিল। প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ১৬২ জন প্রার্থী। ২৩৪ পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৯২৩ মেয়র প্রার্থী। গতকাল প্রতীক পেয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কাউন্সিলর প্রার্থীদের চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব জেসমিন টুলী জানান, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন রবিবার পর্যন্ত মেয়র পদে ১৬২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখন ২৩৪ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৯২৩ জন। এর মধ্যে ছয় পৌরসভায় একক প্রার্থী রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবেন। ইসি সূত্র জানিয়েছে, মেয়র পদে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৩৪ জন, বিএনপির ২২০ জন এবং জাতীয় পার্টির ৭৩ জন। বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীরা হচ্ছেন স্বতন্ত্র ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩৪ পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল রবিবার। মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মাঠপর্যায় থেকে পাঠানো তথ্য একীভূত করা শুরু হলেও শুধু মেয়র পদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া গেছে। ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের গতকাল সকালে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। দল মনোনীতরা দলীয় প্রতীক, স্বতন্ত্র মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত মেয়র প্রার্থীরা সংরক্ষিত তালিকা থেকে পছন্দের প্রতীক বরাদ্দ পান। একই প্রতীক একাধিক প্রার্থী চাইলে লটারি করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। অতিরিক্ত তালিকা থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ মেয়র : জানা গেছে, নোয়াখালীর চাটখিল পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা শেখ আহম্মদ হোসেন মীর্জা, পিরোজপুর পৌরসভায় হাবিবুর রহমান মালেক, জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভায় মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবির, ফেনী সদর হাজী আলাউদ্দিন ও পরশুরামে নিজামউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী সাজেল বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হচ্ছেন।

বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ৬৪ কাউন্সিলর : এদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৮ হাজার, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৫৩৩জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৪ কাউন্সিলর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হচ্ছেন।  ইসি সূত্র জানায়, ফেনীর তিন পৌরসভার মোট ৪৮টি কাউন্সিলর পদের ৪৪টিতেই ভোট হবে না। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও নির্বাচিত হচ্ছেন চট্টগ্রামের রাউজানে ১২ জন, পিরোজপুর পৌরসভায় দুজন, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে একজন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও লাকসাম পৌরসভায় দুজন, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় দুজন এবং বগুড়ার ধুনটে একজন কাউন্সিলর।

ইসির ১০ নির্দেশনা : পৌরসভায় আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলেও মিছিল-মিটিং-শোডাউনসহ ১০ ধরনের বিধি-নিষেধ প্রার্থীদের মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ধরনের মিছিল বা মশাল মিছিল বা যানবাহনে মিছিল সহকারে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অন্তত ১০ ধরনের বিধি-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। ইতিমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বিধি-নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো পাঠিয়ে দিয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচারসহ নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

মাইক্রোফোনের ব্যবহার : প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি একটি ওয়ার্ডে পথসভার জন্য একটি এবং নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি মোট দুটি মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রচারণা দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

পোস্টার, হ্যান্ডবিল বা লিফলেট : প্রার্থীর পোস্টার হতে হবে সাদা-কালো। পোস্টারের আয়তন হবে দৈর্ঘ্যে ৬০ সেমি এবং প্রস্থে ৪৫ সেমি। এতে ছাপানো ছবি পোট্রেট হতে হবে এবং কোনো অনুষ্ঠান বা মিছিলে নেতৃত্ব দান, প্রার্থনারত অবস্থা ইত্যাদি ভঙ্গিমার ছবি ছাপানো যাবে না। নির্বাচনী প্রতীকের আকার কোনোভাবেই তিন মিটারের বেশি হবে না। প্রার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও তারিখবিহীন কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না। পোস্টার কেবল নির্বাচনী এলাকায় ঝোলানো যাবে। কোনো স্থাপনার দেয়াল বা যানবাহনে পোস্টার বা হ্যান্ডবিল বা লিফলেট লাগানো যাবে না।

দল প্রধানের ছবি : প্রার্থী তার পোস্টারে তার ছবি ছাড়া কেবল দলীয় প্রধানের ছবি ছাপাতে পারবেন। দলীয় প্রধানের ছবি লিফলেটেও ছাপানো যাবে।

মিছিল বা শোডাউন : নির্বাচনে যে কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন নিষিদ্ধ। প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ যে কোনো প্রকারের মিছিল বা মশাল মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না। ইসি অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো যান চালাতে পারবেন না।

সভা-সমিতির বাধা-নিষেধ : পথসভা বা ঘরোয়া সভা ছাড়া কোনো সভা করতে পারবেন না। তবে ঘরোয়া সভা করতে হলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে তা অবহিত করতে হবে। আর পথসভা কোনো স্থানে এমনভাবে করা যাবে না, যাতে জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা হয়। এ ছাড়া অন্য প্রার্থী কোনো পথসভা বা ঘরোয়া সভায় বাধা দিতে পারবেন না।

বিলবোর্ডে প্রচারণা : নির্বাচনে কোনো ধরনের স্থায়ী বা অস্থায়ী বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। অথবা অন্য কোনো কাঠামো বা বৃক্ষ ইত্যাদিতে বিল বোর্ড স্থাপন বা ব্যবহার করা যাবে না।

জনগণের চলাচলে বিঘ্ন করে গেট-তোরণ বা ঘের নির্মাণ : নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের গেট-তোরণ বা ক্যাম্প নির্মাণ কিংবা জনগণের চলাচলের অসুবিধা হয় এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। প্রচারণার জন্য ৩৬ বর্গমিটারের বেশি স্থান নিয়ে প্যান্ডেল নির্মাণ করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করতে পারবেন না প্রার্থীরা। কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস করা যাবে না। উপাসনালয়ে প্রচারণা নিষিদ্ধ : নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ মসজিদ, মন্দির বা উপাসনালয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন না।

সর্বশেষ খবর