মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসু বলেছেন, দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। বাড়াতে হবে বিনিয়োগ। আর্থিক খাতের সঙ্গে  যত বেশি দরিদ্র মানুষকে সংযোগ করা যাবে বেসরকারি খাতও তত বেশি শক্তিশালী হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সুসমন্বয় ছাড়া এটির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে সমন্বিত উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে অতিক্রমও করেছে। ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও বড় মাপের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পথে পা বাড়াতে বাংলাদেশ এখন প্রস্তুত। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক বিষয় সংক্রান্ত বিভাগ ইউএনডেসার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতি, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ নিয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্বব্যাংকের প্রধান এ অর্থনীতিবিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে আমি মনে করি। আবেগ এবং পেশাদারিত্বের এক অপূর্ব মিশেল দেখা গেছে শেখ হাসিনার মধ্যে। অর্থনীতির উদীয়মান তারকা, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কও নতুনমাত্রা পাবে বলে মনে করি। একই সঙ্গে আর্থিক বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ এবং নীতি-নির্ধারকদের বিচক্ষণতা প্রশংসাযোগ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বকে শিখিয়েছে কীভাবে দারিদ্র্য রুখতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে কার্যক্রম শুরু করতে হয়। এই ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনুসরণীয়। ড. বসু বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশের পদক্ষেপ শিক্ষণীয়-বাংলাদেশ কীভাবে দারিদ্র্য দূর করছে এবং মানুষকে আর্থিক খাতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পুরোপুরি প্রস্তুত ‘টেক অফ’ করার জন্য। খুব কম দেশই রয়েছে যাদের অর্থনীতি এভাবে উঠতে পারে। কোশিক বসু বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে ছয় শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই প্রবৃদ্ধিতে ধনী-গরিব সবারই অবদান আছে। দেড় দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পেরেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গরিব মানুষকে আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে; যা উল্লেখ করার মতো। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও মোবাইল ব্যাংকিং। এগুলোর কারণে মানুষের টাকার ব্যবহার বেড়েছে ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্তিশালী মুদ্রানীতির কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশ্ব মন্দার কোনো প্রভাব নেই। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অর্জন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বিগত ১০ বছর ধরেই ৬ এর ঘরে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি এবার ৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছাবে। কেবল প্রবৃদ্ধি নয়, বিশ্বমন্দার নেতিবাচক প্রভাব থেকেও মুক্ত থেকেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। গভর্নর বলেন, দেশি-বিদেশি নানা বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বিশ্ব সমাজের নজর কেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন অতি মাত্রায় জরুরি। আতিউর রহমান বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি চমকপ্রদ জায়গা। বিদেশিরা এখানে সস্তা শ্রমে উত্পাদনমুখী খাত, অবকাঠামোগত খাত, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউডিইএসএ গ্লোবাল ইকোনমিক মনিটরিং ইউনিটের প্রধান ড. হামিদ রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর