শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জামায়াত প্রার্থীরা গোপনে, খবর নেই জাতীয় পার্টির

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জামায়াত প্রার্থীরা গোপনে, খবর নেই জাতীয় পার্টির

সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটি আসন্ন ২৩৪ পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মাত্র ৭৬টিতে। দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ৭৬ পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে মাঠে তাদের তেমন খবর নেই। কেন্দ্র থেকেও কোনো সহযোগিতা করছে না। অন্যদিকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী হামলা-মামলার কারণে গোপনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ৩২ জন জামায়াত প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কেউ দলের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন না। প্রধান বিরোধী দল হওয়ার পরও জাতীয় পার্টি ২৩৪ পৌরসভায় প্রার্থী দিতে পারেনি জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের বলেন, আইনগতভাবে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল নয়। বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টি কোনো ‘না’ ভোটও দেয়নি। যারা সরকারি দলের সমর্থক তারা নৌকায় ভোট দেবে। যারা সরকারকে অপছন্দ করে তারা ধানের শীষে ভোট দেবে। দলের অস্পষ্ট রাজনীতির কারণে দলের প্রতি মানুষের আর আকর্ষণ নেই। তাই দলের নেতারাও প্রার্থী হতে চান না। জানা যায়, দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভারত সফর শেষে রবিবার দেশে ফিরেছেন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। সেখানে দলীয় কাউন্সিল এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের একটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ কোনো ভূমিকাও রাখছেন না। পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু তার বাবার অসুস্থতার জন্য দেশের বাইরে। নামকাওয়াস্তে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা কোনোদিন মিটিংও করেননি। পার্টির ৪২জন প্রেসিডিয়ামের একজনও কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেননি। দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য এলাকায় প্রার্থী দিতে পারেননি। এমনকি কোনো কোনো এমপি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রার্থীরা সবাই হতাশায়। প্রশাসন নিরপেক্ষ রাখার জন্য কেন্দ্রের কাউকে অভিযোগ দিতে পারছেন না। কাউকে খুঁজেই পাচ্ছেন না। কাকরাইলের পার্টি অফিস শূন্য। প্রধান বিরোধী দল হয়েও বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসে রাজধানীতে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত প্রার্থীরা কেন্দ্রে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কাউকে পাশে পাচ্ছে না। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দ্বারা বাধা পাচ্ছেন। সম্প্রতি বাঘেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র প্রার্থী দলের মত্স্যজীবী পার্টির সভাপতি সোমনাথ দে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীদের দাবি, মিথ্যা মামলায় তাকে জেলেও পাঠানো হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো পৌর নির্বাচনে ভরাডুবিতে পড়তে যাচ্ছে দলটি। তবে সবাই মিলে চেষ্টা করলে বেশ কয়েকটা পৌরসভায় ভালো ফল করা যেত। সমন্বয় কমিটির প্রধান পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোহেল রানা বলেন, কতজন চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন রবিবার জানাতে পারবেন। দেশের কথা দলের কথা ভেবে সব পৌরসভায় প্রার্থী দেইনি। নির্বাচনে টুকটাক গণ্ডগোল হয়েই থাকে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষ মাঠে। দলের নেতারা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে সুবিধা করতে পারবেন না। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী পার্টির চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় এমন দাবি করলেও সংগঠনের অবস্থা এর বিপরীত। নির্বাচন সমন্বয় কমিটির সদস্য সুমন আশরাফ জানান, জাতীয় পার্টি প্রার্থীরা ৯৩টি পৌরসভায় মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাঁচজন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকিদের বাতিল হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি জেলার সভাপতি বলেন, কীভাবে প্রার্থী দেব। সাংগঠনিক সমস্যার কথা পার্টির চেয়ারম্যানকে বলা যায় না। তাকে কয়েকজন নেতা ঘিরে থাকেন। তাদের কারণে কথা বলা যায় না। রাজধানীতে সমাবেশ হলে জেলার নেতারা কথা বলতে পারি না। পার্টির চেয়ারম্যান জেলা সম্মেলনে অংশ নেন। দেখা যায়, আশপাশে থাকা কয়েকজন নেতা পার্টির চেয়ারম্যানকে একটি তালিকা দেন। সে অনুযায়ী কমিটি গঠন হয়ে যায়। এভাবে সংগঠন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এদিকে, যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা কারাগারে। যারা বাইরে আছেন, তারাও বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে। দুই মাসে দলের অন্তত ৪ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এরপরও ৩২ পৌরসভায় মেয়র পদে লড়ছে জামায়াত। প্রার্থীরা দলের সমর্থনে লড়লেও নির্বাচন নিয়ে একেবারেই নিশ্চুপ। এক মাসে নির্বাচন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। দলের প্রার্থী কারা, কোন কোন পৌরসভায় লড়ছেন জামায়াত সমর্থিতরা এ নিয়েও কোনো কথা বলেনি। দলের নির্বাচন সমন্বয় কমিটির নেতাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, দল সমর্থিত প্রার্থীদের জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। চলমান ধরপাকড়ে পড়বেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। তার চেয়ে প্রার্থীদের স্বতন্ত্র পরিচয়েই নির্বাচন করা মঙ্গলজনক। জানা যায়, নীরবতাই জামায়াতের কৌশল। কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় সিদ্ধান্তেই নীরব থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রত্যাশিত ফল ও প্রার্থীদের নিরাপদে রাখতেই এ সিদ্ধান্ত। জামায়াত সমর্থিত চার মেয়র প্রার্থী কারাগার থেকে নির্বাচন করছেন। তাদের মুক্তিও দাবি করা হয়নি। নির্বাচনে কার্যক্রম চালাতে গিয়ে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের বিষয়েও কোনো কথা বলছে না দলটি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর