শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নান্দাইলে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা আওয়ামী লীগের

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, নান্দাইল থেকে

নান্দাইলে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা আওয়ামী লীগের

ময়মনসিংহের সর্বপূর্বের কিশোরগঞ্জ ঘেঁষা পৌরসভা নান্দাইল। দিন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী তত্পরতা এখানে ততই জমে উঠেছে। এরই মধ্যে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা এলাকা। সর্বত্র বিরাজ করছে উত্সবের আমেজ। এই পৌরসভায় হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীও রয়েছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে হলেও দলীয় দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগের একাংশ ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকেই জানিয়েছেন, তৃণমূল আওয়ামী লীগের মুখে মুখে এখন ‘জয় বাংলা ধানের শীষের’ স্লোগান শোনা যাচ্ছে।

এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন রফিক উদ্দিন ভূইয়া, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুল, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে শফিকুজ্জামান জুয়েল, জাসদের মশাল প্রতীকে আমরু মিয়া ও একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী মোবাইল ফোন প্রতীকে মো. শফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন ও নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় তারা আলাদাভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এরই জের ধরে বর্তমান এমপি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও একজন যুগ্ম সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করে পৌর নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদেও এভাবে দুজন প্রার্থীকে বিভক্ত দুই গ্রুপ থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ভূইয়াসহ পুরো কমিটির সদস্যরা বিএনপি প্রার্থী পিকুলের পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে পরে কথা বলব। এখন ব্যস্ত আছি।’ গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মেয়র প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিক উদ্দিন ভূইয়া ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাতলিপাড়া, কাকচর, ভূইয়াপাড়া, বালিয়াপাড়া এলাকায় জনসংযোগ করেছেন। ভূইয়াপাড়ার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেন। রফিক উদ্দিন ভূইয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। জয় আমার হবেই ইনশাল্লাহ। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের একটি অংশ বিএনপির প্রার্থী পিকুলের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে। তবে এ জন্য আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।’ এদিকে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নমূলক কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ভোটারদের নৌকার দিকে ভিড়ানোর চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিদ্যুত্ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বিদ্যুতের খুঁটিও পুঁতছেন। যদিও দিচ্ছেন না কোনো সংযোগ। তবে তিনি এসব করছেন কৌশলে। প্রার্থীকে সঙ্গে না নিয়ে নিজে একাকী এসব করে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী পিকুলের অভিযোগ, এসব নিয়ে তিনি রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পল্লীবিদ্যুত্ সমিতির নান্দাইল জোনাল শাখার ডিজিএম অভিলাষ পাল বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হলেও নির্বাচনের আগে কোথাও সংযোগ দেওয়া হবে না। নান্দাইল পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহানুর আলম বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের মিটিংয়ে (আজ শনিবার) বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এলাকার উন্নয়নে আমি সব সময় উপজেলার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ঘুরে বেড়াই। আর বিদ্যুতের খুঁটি লাগানোর ঘটনা পল্লীবিদ্যুতের রুটিনমাফিক কার্যক্রম। এখানে আমার কোনো হাত নেই।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী আজিজুল ইসলাম পিকুল গতকাল সকাল থেকে ২, ৩, ৪, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জনসংযোগ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পথসভা করেছেন। দুপুরে নান্দাইল বাজার কাচারি জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। পরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জুয়েলের কিছু প্রচারণা থাকলেও জাসদের আমরু মিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলামের কোনো প্রচারণা চোখে পড়েনি। দেখা গেছে, কাউন্সিলর প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ডের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চষে বেড়াচ্ছেন তারা। ভোটারদের তারা নিজের প্রতীকে ভোট দিতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রফিক উদ্দিন ভূইয়া নান্দাইল পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি বিগত পাঁচ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি বই আকারে প্রকাশ করে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। বিএনপিদলীয় মেয়র প্রার্থী এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুল সৌদি আরব বিএনপির দক্ষিণাঞ্চল শাখার সভাপতি একেএম রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই এবং নান্দাইল পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি। ভোটের ব্যাপারে নান্দাইল পুরাতন বাজারের চা দোকানি মিয়ার আলী বলেন, ‘বাজারে হরহামেশা মিছিল অয়, জয় বাংলা-ধানের শীষের স্লোগান কইতে হুনছি।’ রিকশাচালক শমসের বলেন, ‘কিতা কইতাছুন, ইলেকশনতো অইবো তবে অপারেশনও অইতারে। আগেও হইছে। দুজনরে পক্ষির মতো গুলি কইরা মারছেও।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এক সদস্য বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ভোটের ফলাফল নৌকার পক্ষেই যাবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নৌকার পক্ষে কাজ করছি।’

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় শ্রেণির এই পৌরসভার নিজস্ব কোনো ভবন নেই। একটি ভাড়া ভবনে চলছে কার্যক্রম। নান্দাইল পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার ৩৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৫৮৪ জন ও মহিলা ১০ হাজার ৭৫০ জন। মেয়র পদে ৫ জন, ৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ৩২ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সর্বশেষ খবর