শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের কিছুই স্পষ্ট নয়

জুলকার নাইন

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের কিছুই স্পষ্ট নয়

ড. আকমল হোসেন

প্রবীণ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. আকমল হোসেন বলেছেন, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়। অদ্ভুত এ জোটের কাজ কী হবে, এটা কি সামরিক জোট না অন্য কিছু, কোন প্রক্রিয়ায় এটি গঠিত হলো, তারা কি সরাসরি যুদ্ধে নামবে নাকি অন্য কিছু করবে— এর কিছুই পরিষ্কার নয়। তাই যার বর্তমানই নেই, তার ভবিষ্যত্ নিয়ে কোনো প্রত্যাশা রাখা যায় না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। তবে তিনি সৌদি আরবের এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তেই নেওয়া বলে মনে করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসরকালীন ছুটিতে থাকা ড. আকমল হোসেন বলেন, সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোট গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো একটি সামরিক জোট গঠনের আগে অনেক আলোচনা ও কূটনৈতিক নানা বিচার-বিশ্লেষণ হয়। কিন্তু ৩৪ দেশের জোট গঠনের আগে কখন কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হলো, তার কিছু জানি না। হঠাত্ করে পত্রিকায় খবর এলো, বাংলাদেশ সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগ দিয়েছে। কিন্তু ন্যাটোর মতো সামরিক জোট এখনো আছে। এ ধরনের জোট গঠনের ক্ষেত্রে আগে চুক্তির প্রয়োজন হয়। কিন্তু নতুন জোটের ক্ষেত্রে কখন চুক্তি হলো, চুক্তির শর্ত কী— কিছু শুনলাম না। এটিকে সামরিক জোট বলা হবে, নাকি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেমন তথ্যবিনিময়ের কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হয়েছে, তা বলা হবে— তা-ও স্পষ্ট নয়। এটি কি তথ্য সংগ্রহের পর কোনো পদক্ষেপ নেবে। সামরিক পদক্ষেপ মানে তো যুদ্ধ। আর আইএসের বিরুদ্ধে যদি যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ এভাবে যোগ দিতে পারে না। সামরিক পদক্ষেপ বা যুদ্ধ করার আগে সংসদে পাস হতে হবে। আমার কাছে এ জোটকে অদ্ভুত ও রহস্যজনক মনে হচ্ছে। ড. আকমল হোসেন বলেন, মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারাই সৌদি আরবের মাধ্যমে এমন জোট গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এর আগে ’৯১ সালে ইরাকের কুয়েত দখলের ফলে সৃষ্ট উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ও জোট গঠনের উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে নিয়েছিল। পরে দেখা গেল, সৌদি বাদশাহ বাংলাদেশে বিশেষ দূত পাঠিয়ে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। বাংলাদেশ সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণ রক্ষা করে আড়াই হাজার সৈন্য পাঠিয়েছিল। যদিও যুদ্ধ করতে হয়নি। এবারও সে একই প্রক্রিয়ায় হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। এক বছর ধরে বিমান হামলা চালালেও আমেরিকা এখন আইএসের বিরুদ্ধে স্থলবাহিনীর মাধ্যমে কোনো সরাসরি যুদ্ধে যাবে না। কিন্তু আইএসকে পরাজিত করতে হলে একটি যুদ্ধের দরকার। বর্তমান আমেরিকার পক্ষে সে যুদ্ধ করা মনে হয় সম্ভব নয়। কারণ প্রেসিডেন্ট ওবামা চান না কোনো যুদ্ধে জড়াতে। রিপাবলিকানদের একটি অংশ ছাড়া তার দেশের সাধারণ মানুষও স্থলযুদ্ধের বিরুদ্ধে। তাই আইএস আক্রান্ত এলাকাগুলোর পাশের রাষ্ট্রগুলোর মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়ে আইএসকে মোকাবিলা করাই তাদের কৌশল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচারের কারণে এ জোটে অংশ নিতেই পারে। আবার সৌদি আহ্বানও নানা কারণে বাংলাদেশের পক্ষে ফেলে দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু এটি কোনো ক্লাবের সদস্য হওয়া নয়, সদস্য ফরম পূরণ করলাম এবং যোগ দিলাম। এটা সামরিক জোট হলে অনেক বেশি তাত্পর্যপূর্ণ। এখন বাংলাদেশের উচিত তার ভূমিকা সম্পর্কে পরিষ্কার হওয়ার পরই জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

সর্বশেষ খবর