শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী হওয়া দুরূহ : সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনসহ গত তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ রয়েছে। একটি দলের পক্ষ থেকে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল হলে সবকটি বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও এমনটা পরিলক্ষিত হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, এত অনিয়মের পর আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশাবাদী হওয়া দুরূহ। গতকাল  ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সুজন ‘পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, পর্যাপ্ত জনবল থাকলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর ২৩৪ পৌরসভার মধ্যে ১৭৫টিতে জনপ্রশাসন থেকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ইসির নির্দেশনা পালন করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এরা ইসির থেকে মন্ত্রী-এমপিদের কথাই বেশি গুরুত্ব দেন। প্রার্থীদের করা অভিযোগ ছাড়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) স্ব-উদ্যোগে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ছাড়া ইসির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এ সময় নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন। বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ইসি বলছে তাদের কাছে অভিযোগ এলেই কেবল তারা খতিয়ে দেখবে। ইসির দায়িত্ব রেফারির মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলোয়াড়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন বক্তব্য ইসির কাছ থেকে এলে নির্বাচন আর কেমন হবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি। হলফনামার তথ্য যাচাই সম্পর্কে ইসিকে উদ্দেশ্য করে বদিউল আলম বলেন, হলফনামায় যদি কেউ মিথ্যা তথ্য দেন তবে ইসি সেই প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করবে। নারী প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, নীতিমালায় রয়েছে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সব কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী থাকবে। কিন্তু সে অনুপাতে নগণ্য সংখ্যক নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি জানুয়ারিতে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করার কথা। কিন্তু এ বছর এর ব্যত্যয় হওয়ায় সম্ভাব্য ভোটার প্রার্থীরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। এটি নিয়মের লঙ্ঘন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সন্দেহ ও সংশয়কে আরও বাড়িয়েছে দিয়েছে। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, মনোনয়নপত্র বাছাই, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। বলা হয়, ফেনীতে ৩৩টি ওয়ার্ডে একজন করে কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মনোনয়ন দাখিল করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। অনেকের মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইসি এসব ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। একটি দলের পক্ষ থেকে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল হলে সবকটি মনোনয়নপত্র বাতিলের বিধান থাকলেও মাগুরা সদর, খুলনার পাইকগাছা, বরগুনার বেতাগীসহ বিভিন্ন স্থানে সব মনোনয়ন বাতিল না করে তাদের মধ্যে একজন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটি নির্বাচনী আইনের পরিপন্থী। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইতিমধ্যেই সরকারদলীয় অনেক এমপি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। নির্বাচন কমিশন তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে। জেল-জরিমানাসহ প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থাকলেও ইসিকে কোনো কঠোর ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। এত অনিয়ম অভিযোগের পরও এ নির্বাচন কেমন হবে তা নির্ভর করছে ‘যদি’র ওপর। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ করতে হলে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানায় সুজন। মেয়র প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩৪১ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। আওয়ামী লীগের ২২১ জন প্রার্থীর মধ্যে এই সংখ্যা ৯০, বিএনপির ২০৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮৩ জন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ২২৪ জন বিদ্যালয়েরই গণ্ডি পেরোতে পারেননি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪০, বিএনপির রয়েছেন ৪০ জন। এ ছাড়া মোট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৬৫২ জন ব্যবসায়ী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৬৫ জন ও বিএনপির রয়েছেন ১৬২ জন। সুজন বলছে, অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রার্থীদের মামলা সম্পর্কে বলা হয়, ২১৯ জন মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ৩৩ প্রার্থী ও বিএনপির ৯৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তবে অতীতে আওয়ামী লীগের ১০২ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ও বিএনপির ১০৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা ছিল। এ ছাড়া মোট ৩৬ প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছেন ৭ প্রার্থী ও বিএনপির ১৫ প্রার্থী। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে সুজন বলেছে, সব প্রার্থীর হলফনামা দ্রুত ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। প্রার্থীদের তথ্যসমূহ ভোটারদের মধ্যে প্রচার করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ছিনতাই রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ‘যে কোনো মূল্যে জয়ী হওয়া’র দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় সুজন। আইনশৃঙ্খলার প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটি জানায়— পক্ষপাতহীনভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করুন। ইসির নির্দেশ মেনে চলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আহ্বান জানায় সুজন।

সর্বশেষ খবর