মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাংবাদিক সজীব নিখোঁজ রহস্য আরও ঘনীভূত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক সজীব নিখোঁজ রহস্য আরও ঘনীভূত

ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে সাংবাদিক আওরঙ্গজেব সজীব নিখোঁজ রহস্য।  মিলছে না কোনো উত্তর। দুই দিন ধরে এই সাংবাদিক নিখোঁজ হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের তেমন একটা তত্পরতা দেখা যায়নি। দায়সারা বক্তব্য দিয়ে তারা সময় পার করছেন। নিখোঁজ হওয়ার পিছনে কোনো চক্র জড়িত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাছাড়া লঞ্চ থেকে তার লাফিয়ে পড়ারও কোনো প্রমাণ মেলেনি।

ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সজীবের অবস্থান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও লঞ্চ টার্মিনাল রাজধানীর সদরঘাট থেকে এমভি তাকওয়া নামের ওই লঞ্চটি সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে, গতকাল সজীবের স্ত্রী  মোরশেদা বেগম নিশি বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। জানা গেছে, গত রবিবার সকাল ৯টার সংবাদে ঢামেক হাসপাতাল এলাকা থেকে বেসরকারি টেলিভিশন ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এ অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত একটি নিউজের লাইভে ছিলেন সজীব। প্রায় ৯টা ২২ মিনিট পর্যন্ত সরাসরি সম্প্রচার হওয়া ওই নিউজের পর ওই টেলিভিশন চ্যানেলের নারী সাংবাদিককে দায়িত্ব দিয়ে আরেকটি সংবাদ সংগ্রহের জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাচ্ছেন বলে চলে যান সজীব। ওই নারী সাংবাদিককে তিনি বলে যান জরুরি কোনো দরকার হলে তাকে ফোন দেওয়ার জন্য। পরে ওই নারী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেও মিলেছে এর সত্যতা। এ ব্যাপারে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুলতানা রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সজীব তো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন। তবে সকাল ৯টার সময় সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে সে উঠল কীভাবে? আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখা। গতকালও কান্না থামছিল না সাংবাদিক সজীবের স্ত্রী মোরশেদা বেগমের। ছেলে সোহান ও মেয়ে সাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন তিনি। গত দুই দিন ধরে বাবার শোকে নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেছে সন্তানেরা। অগ্রণী স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ইসমত আরা সাবা বাসায় থাকা সবাইকে বারবার বলছিল, ‘আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও। বাবা আসলেই আমি খাব’। নিজেকে কিছুটা সংযত করে সজীবের স্ত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, শনিবার রাতে অসুস্থ এক সাংবাদিককে দেখার কথা বলে সে টঙ্গী গিয়েছিল। বলেছিল অনেক রাত হতে পারে। পরে ভোর ৫টার দিকে সে বাসায় ফেরে। দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নাস্তা খেয়ে পুনরায় অফিসের কাজের কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে, লঞ্চের মাস্টার ফরহাদ হোসেন গতকালও দাবি করেন, প্রতিদিন সোয়া ৯টায় আমাদের লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। ওইদিন আমি কিংবা লঞ্চের কোনো স্টাফ কোনো যাত্রীকে লাফ দিতে দেখিনি। যদিও পরে আলী নামের এক যুবক ওই সাংবাদিকের মানিব্যাগ, মোবাইলসহ রেখে যাওয়া জিনিসপত্র আমার কাছে জমা দিয়েছেন। এর বাইরে আমি কিছু জানি না। তবে অন্য যাত্রীরা চাঁদপুরে পুলিশের কাছে বলেছেন যে তারা লাফ দিতে দেখেছেন। পুলিশ তাদের মোবাইল নম্বর নিয়েছে।চাঁদপুর নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরুজ্জামান জানান, ঘটনাটি মুন্সীগঞ্জ এলাকায়। তাই এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে তাকওয়া লঞ্চের কোনো কর্মচারী ঘটনার সময় তার পাশে ছিলেন না। গত রবিবার থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিনিধি আওরঙ্গজেব সজীব।

সাংবাদিক আওরঙ্গজেব সজীবের খোঁজ না পাওয়ায় বাকরুদ্ধ স্ত্রী-সন্তান  

 একই সঙ্গে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতেও কাজ করেন তিনি। সজীব বাংলাদেশ মেডিকেল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমআরএ) সাবেক সভাপতি। সজীবের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে। তিনি এক ছেলে ও স্ত্রীসহ ঢাকার বকশীবাজার কমলদাহ রোডের ৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় বসবাস করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর