বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুর্গে দুর্গতিতে বড় দুই দল

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ

ফরিদপুর ও শরীয়তপুর প্রতিনিধি

দুর্গে দুর্গতিতে বড় দুই দল

আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর অঞ্চলে আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। পাঁচ জেলার মোট ১৫ পৌরসভার বেশির ভাগেই মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহীরা। অনেক স্থানে বিদ্রোহীদের হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলের স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মী। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অনেক চেষ্টা করেও বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরাতে পারেননি। ফলে পৌরসভা নির্বাচনে নিজেদের দুর্গে দুর্গতিতে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

ফরিদপুর : ফরিদপুর জেলায় ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হচ্ছে দুটি পৌরসভায়। পৌরসভা দুটি নগরকান্দা ও বোয়ালমারী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের পাশাপাশি এ দুটি পৌরসভায় ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরা ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করছেন তারা। বোয়ালমারী পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, স্বতন্ত্র এবং জামায়াতের প্রার্থী থাকলেও এখানে লড়াই হবে ত্রিমুখী। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিরধা পিকুল। ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন বর্তমান মেয়র ও পৌর বিএনপির সদস্য আবদুস শুকুর শেখ। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের নিয়ামুল হাসান প্রার্থী হলেও ভোটের মাঠে এখনো তার দেখা মেলেনি। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোজাফফর হোসেন বাবলু। আওয়ামী লীগ নেতার ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হওয়ায় বিপাকে আছেন নৌকার প্রার্থী শাহজাহান মিরধা পিকুল। আর আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী থাকায় খোশমেজাজে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। নগরকান্দা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র রায়হানউদ্দিন মাস্টার। বিএনপির প্রার্থী সাইফুর রহমান মুকুল। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হয়েছেন পৌর যুবলীগের সভাপতি মারুফ হোসেন বিকুল। এ পৌরসভায়ও ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখানে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী অর্থাত্ স্বতন্ত্র প্রার্থী বিকুল অভিযোগ করেছেন তাকে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি সব সময় শঙ্কার মধ্যে আছেন। তবে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রায়হানউদ্দিন মাস্টার বলেন, নির্বাচনে পরাজয় জেনেই তারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

শরীয়তপুর : নড়িয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র হায়দার আলীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবু। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ দুশ্চিন্তায় রয়েছে। স্থানীয়ভাবে বলাবলি হচ্ছে, স্থানীয় এমপি কর্নেল (অব.) শওকত আলী এবং নড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম ইসমাঈল হকের বিরোধের কারণেই এখানে দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।  স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল ইসলাম বাবু অভিযোগ করেছেন, হায়দার আলীর সমর্থকদের ভয়ে আমার সমর্থকরা প্রচারণা চালাতে পারেন না। তবে আমার কর্মীরা কারও প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হায়দার আলী বলেন, শহীদুল ইসলাম বাবু দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ওর কারণেই আমার কর্মীরা প্রচারণা চালাতে পারছে না। সহায়তা চাইলেও পুলিশ আমাকে কোনো সহায়তা করছে না। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন ব্যক্তির কারণে পুলিশ কিছু বলছে না। জাজিরা পৌরসভায় নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউনুছ বেপারী। এ পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন চারজন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইউনুছ বেপারী বলেছেন, জাজিরা নৌকার ঘাঁটি। যত বিদ্রোহী প্রার্থী থাকুক না কেন এখানে নৌকাই বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান পৌর মেয়র আবুল খায়ের ফকির বলেন, গতবার আমাকে দল থেকে সমর্থন দেওয়া না হলেও স্থানীয় জনগণ আমাকে বিজয়ী করেছে। শান্তিপূর্ণ ভোট হলে এবারও জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। এ ছাড়াও রাজবাড়ী জেলায় ৩টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা কেন্দ্রের চাপে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও তারা গোপনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। মাদারীপুর জেলায় ৩টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। গোপালগঞ্জ জেলার ২টি পৌরসভায় দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা স্বস্তিতে  নেই। দুর্গতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সরকারি দলের অনেক প্রার্থী।

সর্বশেষ খবর