বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নৌকার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের এমপি

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ

নৌকার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের এমপি

দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নতুন মেরুকরণে ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভা নির্বাচনের ভোটের হিসাব-নিকাশ। ময়মনসিংহ-১১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি আমানউল্লাহর পছন্দের প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার কর্মী-সমর্থকরাও রয়েছেন নীরব ভূমিকায়। ফলে দুই গ্রুপে বিভক্ত আওয়ামী লীগ। তবে প্রচারণায় না থাকলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলেই রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। অন্যদিকে বিএনপির দুই গ্রুপ থাকলেও নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীককে জয়লাভ করাতে একাট্টা হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের প্রার্থী না থাকায় এ ভোট কোনদিকে যাবে তা নিয়েও প্রার্থীর মধ্যে টেনশন শুরু হয়েছে।

ভালুকা পৌরসভায় মোট ভোটার ২১ হাজার ৪৯৬। এর মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৪২ ও মহিলা ১০ হাজার ৪৪৫। মেয়র পদে চারজন এবং সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৩১ জন। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. কাইয়ুম, বিএনপির প্রার্থী মো. হাতেম আলী খান। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওমর ফারুক মাস্টার, বিএনপির বিদ্রোহী মফিজ উদ্দিন সরকার। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রচারণা চোখে পড়েনি। এ পৌরসভায় এমপির পছন্দের প্রার্থী ছিলেন সাদিকুর রহমান তালুকদার। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন পান ডা. কাইয়ুম। এতে নাখোশ হয়ে এমপি তার অনুসারীদের নীরব থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের বড় ফ্যাক্টর এখন নিজ দলের এমপি নিজেই— এমন আলোচনা সর্বত্র। আগে থেকেই দুটি গ্রুপে বিভক্ত আওয়ামী লীগ এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। একটি গ্রুপ এমপির নিয়ন্ত্রণে। অন্যটি উপজেলা চেয়ারম্যানের। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে রয়েছেন সবচেয়ে বেশি পদভারী নেতারা। উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগের নেতারা উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার সঙ্গে থেকে নৌকার পক্ষে রাত-দিন কাজ করছেন। অপরদিকে এমপি আমানউল্লাহ ও তার কর্মী-সমর্থকদের নৌকার পক্ষে কাজ করতে দেখা না গেলেও তাদের দাবি কাজ করছেন।

মেয়র প্রার্থী ডা. কাইয়ুম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত (গতকাল) এমপি আমানউল্লাহ একটিবারও খোঁজ নেননি। কেমন চলছে নির্বাচন বা আমরা কী নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারব নাকি পরাজিত হব। শুধু প্রার্থীই নয়, এমন অভিযোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম আফরোজ খান আরিফ। তারা বলেন, নেত্রী নৌকার প্রার্থী দিয়েছেন। আমরা নৌকার পক্ষে কাজ করছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটিবার খবর নেননি এমপি আমানউল্লাহ। এসব অভিযোগ নাকচ করে এমপি আমানউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন পাক আর না পাক মাঠে তো নৌকা আছে, তাই আমরাও আছি নৌকার পক্ষে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সব মিথ্যা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্সবের নগরীতে পরিণত হয়েছে ময়মনসিংহের শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাত ভালুকা। পৌর এলাকার চারদিকে মাইকিংয়ের প্রচারণা যেমন তেমন, পোস্টারিংয়ের প্রচারণাও রয়েছে ব্যাপক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ক্লান্তিহীন ঘুরতে দেখা যায়। এ পৌরসভায় জাতীয় পার্টি-জামায়াত কোনো নির্বাচনী কার্যক্রমে না থাকলেও তাদের ভোটের দিকে চেয়ে আছেন নৌকা-ধানের শীষের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের আশা, জাতীয় পার্টি-জামায়াতের ভোট নিজেদের বাক্সেই আসবে। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জগ প্রতীকের মফিজ উদ্দিন সরকার বলেন, আমার নির্বাচনী প্রচারণা করতে হয় না। আমি এমনিতেই পাস করব। আমার নির্বাচনী ইতিহাসে ফেল বলে কোনো কথা নেই।

গতকাল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র ডা. এ কে এম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। সকালে শুরুর দিকে পৌরসভার সামনেই দেখা হয় ডা. কাইয়ুমের সঙ্গে। এ সময় তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থী সমানে দুই হাত খুলে টাকা ছিটাচ্ছেন। তিনি অনেক টাকার মালিক। বিভিন্ন গরিব, অসহায়দের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করছেন। তবে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ নিশ্চিত বলে জানান। বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মো. হাতেম আলী খান অভিযোগ করেন, আমাদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন নৌকার পক্ষের লোকজন। তবে হাতেম আলী খান বলেন, নৌকার পক্ষ হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাই এসব করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এমপির লোকজন আমাদের কিছু বলেন না।

অপরদিকে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মো. হাতেম আলী খানকে সকাল থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ভোট চাইতে দেখা গেছে। ভালুকা পশ্চিম বাজারের মুদি দোকানি নাজিম বলেন, ‘এমপি টেমপি বুঝি না। নৌকা পাইছি, নৌকাতেই দিমু ভোট। কাঁঠালিয়া গ্রামের বৃদ্ধ মিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আগে তো হুনছি এমপিত ইলেকশনে নৌকা ধান থাকে। কিন্তু অহন দেহি উল্টা।’

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গাড়িচালক লিটন বলেন, ‘অত-সব বুঝি না, ভোট দিমু নৌকায়। নৌকার সরকার যে রাস্তা বানাইছে, হেতারে ভোট না দিয়া কারে দিমু কনছাইন দেহি।’ এদিকে ভালুকা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল পাঠান বলেন, আমাদের মাঝে কোনো গ্রুপিং নেই। আমরা নৌকার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর