বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ধলেশ্বরীতে উদ্ধার সজীবের লাশ

হত্যা না আত্মহত্যা জট খোলেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

ধলেশ্বরীতে উদ্ধার সজীবের লাশ

নিখোঁজের তিন দিন পর অবশেষে লাশ উদ্ধার হয়েছে সাংবাদিক আওরঙ্গজেব সজীবের। গতকাল বেলা ২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে সজীবের মৃতদেহ ভেসে উঠলে বিকাল ৪টার দিকে নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা লাশ উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সন্ধ্যার দিকে সজীবের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে নেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষেই সজীব আত্মহত্যা করেছেন নাকি খুন হয়েছেন— এ বিষয়টির কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তবে সজীবের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। লঞ্চ থেকে ধাক্কা দিয়ে তাকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাতেম বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত হত্যা না আত্মহত্যা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। তবে সব সন্দেহ মাথায় রেখে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, বেলা ২টার দিকে একটি ছোট ছেলে নদীতে গোসল করতে গিয়ে ওই লাশ দেখতে পেয়ে চিত্কার করে ওঠে। পরে স্থানীয়রা কচুরিপানার মধ্যে একটি লাশ দেখতে পেয়ে মুন্সীগঞ্জ পুলিশে খবর দেয়। নৌ-পুলিশের উপপরিদর্শক ইউনুছের নেতৃত্বে একটি দল ট্রলার নিয়ে বেলা ৩টার দিকে লাশের কাছে যায়। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা। বিকাল ৪টার দিকে মুন্সীগঞ্জ শহরসংলগ্ন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে নয়াগাঁও এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে উদ্ধার করা হয় সজীবের লাশ। লাশের পরনে ফুলপ্যান্ট, একটি গোলাপি রঙের স্টাইপ ফুলশার্ট তার উপরে ‘ভি’ টাইপ হাফ সোয়েটার ছিল। পকেটে ছিল একটি লাল রঙের কলম। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সজীবের স্ত্রী মোরশেদা বেগম নিশি, ছেলে সোহান, ভাই রাজন এবং সহকর্মীরা মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে সজীবের লাশ শনাক্ত করেন। সজীবের স্ত্রী মোরশেদা বেগম দাবি করেছেন, তার স্বামী কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারেন না। কেউ তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়ে গেছে। এ তথ্য পেয়েই সজীব মুন্সীগঞ্জের বাড়িতে যাওয়ার জন্য লঞ্চে চড়েন। লঞ্চ থেকেই তাকে পরিকল্পিতভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তার শাশুড়ি আগে থেকেই অসুস্থ। কিন্তু ঘটনার দিন রবিবার তার অসুস্থ শাশুড়িকে দেখার জন্য মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিল না সজীবের। এদিকে, সজীবের ব্যবহূত দুটি মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোখলেসুর রহমান বলেন, সজীবের মোবাইল ফোনে কয়েকটি কল রয়েছে রহস্যজনক। বিশেষ করে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত এক তরুণী কল করে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ওই সময় সজীব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপোর্ট সংক্রান্ত জরুরি কাজের জন্য যান। কাজ শেষ করেই তিনি ঢামেক হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ত্যাগ করার সঙ্গে সজীবের সকালে অজ্ঞাত ওই তরুণীর মোবাইল ফোনে কল দেওয়ার একটি যোগসূত্র থাকতে পারে।

ক্র্যাবের শোক : সাংবাদিক সজীবের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতির মাধ্যমে এ শোক জানানো হয়। প্রসঙ্গত, গত রবিবার থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিনিধি আওরঙ্গজেব সজীব। সজীব বাংলাদেশ মেডিকেল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমআরএ) সাবেক সভাপতি। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে। তিনি এক ছেলে ও স্ত্রীসহ ঢাকার বকশীবাজার কমলদাহ রোডের ৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় বসবাস করতেন।

সর্বশেষ খবর