বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন

আবাসনে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগে অর্থ পাচার কমবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবাসনে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগে অর্থ পাচার কমবে

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের আবাসনশিল্প বাঁচাতে হলে অপ্রদর্শিত আয় এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বর্তমানে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশে ২০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার তহবিল হলে আবাসন খাত বাঁচবে। এ খাতে বিনিয়োগে ঋণ দিলে হলমার্ক বা ডেসটিনির মতো ঘটনা হবে না। তবে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগে আইনি দ্বৈতনীতি পরিহার করতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে দায়মুক্তি সুবিধা চান রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাব আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা, ২০১৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল মন্ত্রী ও রিহ্যাব সভাপতি এসব কথা বলেন। আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন, ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রবিউল হক, সহসভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান ও রিহ্যাব ফেয়ার কমিটির কো-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. সারওয়ার্দী ভূঁইয়া। বক্তৃতা পর্ব শেষে মেলা প্রাঙ্গণে ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী। পরে তিনি মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এ আবাসন মেলা চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত; খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এবারের মেলায় দেড় শতাধিক স্টলে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ২৫টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। দর্শনার্থীর মেলায় প্রবেশে দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি অন্যটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল টিকিটের ১০০ টাকা। মাল্টিপল টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় পাঁচবার প্রবেশ করতে পারবেন। টিকিটের র্যাফেল ড্রতে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার। টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে ব্যয় করবে রিহ্যাব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, কালো টাকা কী জানি না। টাকা থাকলেই না সাদা-কালো হয়। কালো টাকা বলি আর অপ্রদর্শিত আয় বলি, এটা আবাসন খাতে বিনিয়োগ হলে বিদেশে টাকা পাচার কমবে। ৭৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, এটা রোধ করতে হবে। আর তা করতে হলে সরকারের নীতি পাল্টাতে হবে। এটা খুবই জরুরি কারণ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আবাসন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মন্ত্রী বলেন, কালো টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে যাতে কোনো প্রশ্ন না করা হয়। আমরা আগেও দেখেছি, আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগ হতো। তখন এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। প্রশ্নও করা হয়নি। এ বিষয়টি যেন আবার ফিরে আসে। আবাসন খাত চাঙ্গা করতে হলে কালো টাকা ব্যবহার করতে হবে। দেশের টাকা যেন বাইরে পাচার না হয়। দেশের টাকা যেন দেশেই থাকে, এ বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা হলে দেশের টাকা বিদেশে পাচারের প্রবণতা কমবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করুন। আমরা বলতে পারি, এ খাতে বিনিয়োগ করলে হলমার্ক ও ডেসটিনির মতো ভয় পেতে হবে না। রাজধানীর কালশীতে ভালোমানের অ্যাপার্টমেন্ট করছি। ২০১৬ সালের মধেই এখান থেকে ফ্ল্যাট কেনা যাবে। আমরা অল্প টাকায় সবার জন্য ফ্ল্যাট দিতে চাই। আমি দেখেছি ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় আছে ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। আমরাও অল্প টাকায় ফ্ল্যাট দেব সাধারণ মানুষকে। মানুষ যেন ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফ্ল্যাট পায়, সে ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাব। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। ঢাকা দূষণে ওয়াসাকে দায়ী করে মন্ত্রী বলেন, আজকে বুড়িগঙ্গা, বালু ও তুরাগে দূষণ ছড়াচ্ছে। আমরা এসব নদ-নদীর সামনে যেতে পারি না। এ দূষণের জন্য ওয়াসার সিস্টেমই দায়ী। ওয়াসা স্যুয়ারেজ পাইপলাইন করছে বলে মনে হয় না। এগুলো ড্রেজিং করতে হবে। আমরা নিজেরাই পাইপলাইন বসাতে পারি। ওয়াসার জন্য বসে থাকব না। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দূষণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো দিন দেখিনি কক্সবাজারে বর্জ্য। কিন্তু এখন দেখছি। অনেকে নাকি সেখানে বর্জ্য পাচ্ছে। এর কারণ হোটেলে এসটিপি নেই (বর্জ্য পরিশোধনে নিজস্ব স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট)। তবে আমার হোটেলে এসটিপি আছে। আমি বিদেশ থেকে এনে এসটিপি স্থাপন করেছি। কক্সবাজারের অনেক হোটেল মালিক জানেন না এসটিপি কী। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, চার বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। এ খাতের সংকট উত্তরণের চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, এ খাতে গৃহঋণের ব্যবস্থা করুন। ২০১৩-১৪ সালে আবাসন খাত থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। কিন্তু ২০১৩ সালে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশ থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় দেখেছি, পাচার হওয়া টাকা দিয়ে ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনেছেন পাচারকারীরা। অথচ দেশের টাকা দেশেই বিনিয়োগ করার কথা ছিল। বিদেশে টাকা পাচার ঠেকাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে দায়মুক্তি সুবিধা চেয়ে তিনি বলেন, কালো টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য পরপর তিনটি বাজেটে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সহায়তা দিয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টাকার উত্স জানতে চাওয়ার আইনের কারণে এ টাকা দেশে ধরে রাখা যাচ্ছে না। দুদকের দ্বৈতনীতির কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ নীতি পাল্টাতে হবে যাতে অপ্রদর্শিত আয় বিদেশে পাচার না হয়ে আবাসন খাতে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়। তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনি অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে অপ্রদর্শিত টাকা সাদা করার বিষয়ে বলুন। দেশের টাকা বিদেশে পাচার বন্ধে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, আবাসন দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাত। জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এ হার কমে যাচ্ছে। তিন বছর ধরে এ খাতে মন্দা যাচ্ছে। যে কারণে আমাদের সদস্যরা প্রকল্প নিতে ভয় পাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে একটা পার্থক্য তৈরি হবে এবং ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, এবারের রিহ্যাব মেলায় ব্যাপক দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের জমির ব্যবস্থা করলে আমরা অনেক কম দামে ফ্ল্যাট দিতে পারব। তিনি বলেন, মন্ত্রীর মাধ্যমে ঋণ পেয়েছি। এ জন্য আমরা প্রবাসীদেরও স্বল্প সুদে ঋণে ফ্ল্যাট দিতে পারছি। প্রবাসী ক্রেতাদের জন্য ৫০ঃ৫০ ঋণসুবিধা ইতিবাচক ফল দেবে বলেও তিনি মত দেন।

সর্বশেষ খবর