বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের নতুন ভাবনা চাই

------ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের নতুন ভাবনা চাই

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বিশ্ববাণিজ্যে অবস্থান তৈরি করতে বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে হবে। কেননা সদ্য শেষ হওয়া ডব্লিউটিও সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্জন সামান্য। তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে ভূ-অর্থনীতি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। উন্নত বিশ্ব নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। তার মানে, বিশ্ববাণিজ্য নতুন ধরনের উত্ক্রমের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। দেশগুলো ডব্লিউটিওর বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে। আগামীতে বিশ্ববাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বে। ফলে বাংলাদেশকে নতুন করে বিশ্ববাণিজ্যে অবস্থান নিয়ে ভাবতে হবে। এ সংকট থেকে উত্তরণে স্বচ্ছতা, গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এ নতুন সংকট থেকে উত্তরণে সাফটা, বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক জোটগুলো সক্রিয় করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ-দক্ষিণ আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। সদ্য শেষ হওয়া ডব্লিউটিও এবং বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বিষয়ে মূল্যায়ন জানাতে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে সিপিডি। এতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ছাড়াও বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান প্রমুখ। কেনিয়ার নাইরোবিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সম্মেলন এবং ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্জন হতাশাজনক মনে করে সিপিডি। ডব্লিউটিও সম্মেলন বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান আর জলবায়ু সম্মেলন বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের ডব্লিউটিও সম্মেলনে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাজার উদারীকরণের আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। আন্তর্জাতিক বিশ্ববাণিজ্যে শক্তিশালী তিনটি দেশ (ভারত, চীন ও ব্রাজিল) ও উন্নত বিশ্বের দেশগুলো পুরো আলোচনা নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ সভা থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলো বাড়তি কিছু পায়নি। এসব আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল খুবই নগণ্য। ক্ষেত্রবিশেষে আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় বাংলাদেশসহ অন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে। তাই সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হতাশাজনক বলে মনে করে সিপিডি। তিনি বলেন, নাইরোবির ডব্লিউটিও সম্মেলনে বেসরকারিভাবে সিপিডির তিনজন প্রতিনিধি অংশ নেন। বেশ কয়েকটি সেশনে আলোচনায় অংশ নেন তারা। ডব্লিউটিও সম্মেলনের সব আলোচনা বিচার-বিশ্লেষণ করে এ প্রবন্ধ তৈরি করা হয়েছে। ডব্লিউটিও সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। এবারের সম্মেলনে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ডব্লিউটিওকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য উদারীকরণের আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। সেখানে অনেক স্বল্পোন্নত দেশ অংশ নিতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, ডব্লিউটিওর সুবিধা ভোগ করতে হলে আফ্রিকান স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শক্তিশালী করতে হবে। কারণ আফ্রিকান স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবার তুলা উত্পাদনে ভর্তুকি ও রপ্তানিতে প্রণোদনা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উন্নত বিশ্ব। এতে বাংলাদেশে তুলার দাম বাড়তে পারে। ফাহমিদা খাতুন বলেন, এবারের জলবায়ু সম্মেলনে আমরা কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত অঙ্গীকার পেয়েছি। তহবিল নিয়ে কথা হয়েছে, যে তহবিলটির কথা বলা হয়েছে তা আমরা ঋণ হিসেবে নাকি অন্য কোনো হিসেবে পাব, তা পরিষ্কার নয়। তবে এটা অনুদান হিসেবে দিতে হবে। কারণ জলবায়ুর সমস্যা আমরা সৃষ্টি করিনি। এটা উন্নত বিশ্বের সৃষ্ট। স্বল্পোন্নত দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত। ফাহমিদা বলেন, উন্নত বিশ্ব উত্পাদন করতে গিয়ে আমাদের ক্ষতি করছে। দেখা যাচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষতি করা এসব দেশ জলবায়ুর জন্য তহবিলও তৈরি করছে, কিন্তু তা ওইসব উন্নত দেশেই রয়ে যাচ্ছে। এ তহবিল স্বল্পোন্নত দেশকে দিতে হবে। জলবায়ু সমস্যায় উপকূলের ১৭ থেকে ২০ শতাংশ বিলীন হয়ে যাবে, তখন ওইসব অঞ্চলের লোকগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য যাদের কারণে এসব সমস্যার সৃষ্টি, তাদের অর্থ দিয়ে ক্ষতিপূরণের কাজ করতে হবে। কিন্তু সার্বিকভাবে বলতে গেলে এবারের সম্মেলনেও বাংলাদেশের অর্জন সন্তোষজনক নয়।

সর্বশেষ খবর