সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
এক দিন পরই পৌরসভায় ভোট উৎসব

শেষ মুহূর্তে বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ

সিইসি বললেন, পরিস্থিতি ভালো

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেষ মুহূর্তে বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ

পৌরসভা নির্বাচনের শেষ মুহূর্তেও হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছেই। গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী আবার কোথাও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ঘের ঘটনাও ঘটে। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারণায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় অনন্ত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ—

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ত্রিশালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামানের কর্মীদের মারধর ও একজনকে ছুরিকাঘাত করেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জুয়েল সরকারের কর্মীরা। গতকাল উপজেলার ৭নং ওয়ার্ড সংলগ্ন বদরুল ফিলিং স্টেশন এলাকায় আনিছের কর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছিল। একই স্থানে আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহিদুল ইসলাম সরকার জুয়েলের নেতা-কর্মীরাও প্রচারণা চালাচ্ছিল। এ সময় জুয়েলের কর্মীদের সঙ্গে আনিছের কর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে জুয়েলের কর্মীরা আনিছের কর্মীদের ওপর হামলা করে। এ সময় হুমায়ুন কবির, জিয়াউর রহমান ও মাহবুবুল আলম পারভেজ আহত হয়। আর ছুরিকাঘাত করায় মারাত্মক আহত অবস্থায় কর্মী আকরামকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

পটুয়াখালী : কুয়াকাটায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আক্কাস হাওলাদার তার স্বজনদের নিয়ে পাশের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে মথাউপাড়া এলাকায় পৌঁছলে একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাবীব শরিফের সমর্থক ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের মারধর শুরু করে। খবর পেয়ে আক্কাস সমর্থকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় আক্কাসসহ তার সমর্থক আল-আমিন, জাফর, ধলু হাওলাদার ও কাউন্সিলর হাবীব সমর্থক স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী খোকন বিশ্বাস, খলিলুর রহমান, মিলন গাজী, হুয়ায়ুন কবিরসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়।

বরগুনা : বরগুনার বেতাগী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবিএম গোলাম কবিরের সমর্থকরা। হুমায়ুন কবির অভিযোগ করেন, তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা শহরের উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত বাড়িতে কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। হঠাৎ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী ধর ধর বলে তার বাড়িতে হামলা চালায়। দরজা খোলা থাকায় সহজেই হামলাকারীরা ঘরে ঢুকে হাতে থাকা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাসার বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করে। ১০-১৫ মিনিট পরে হামলাকারীদের সঙ্গে আরও শতাধিক লোক যুক্ত হয়। এ সময় তারা স্বর্ণালঙ্কারসহ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্রও লুটে নেয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবিএম গোলাম কবির বলেন, আমরা তাদের ওখানে কোনো হামলা করিনি বরং তারা উল্টো আমার অফিস ও এক সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।

মোরেলগঞ্জ : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হকের বাড়িতে চারটি ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। একটি ককটেল দেয়ালের সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়, বাকি তিনটি পুলিশ উদ্ধার করেছে।

নোয়াখালী : হাতিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী ইউসুফ আলীর সমর্থকদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে গতকাল ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাতিয়ায় এক মতবিনিময় সভা শেষে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুদ্দিন নির্বাচনী প্রচারণায় আসার পথে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইউসুফ আলীর সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে তার সমর্থিতরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল হুদা সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে থাপ্পড় মারার অজুহাতে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। 

পাবনা : সুজানগর পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছে। বিএনপি প্রার্থী আজম আলী বিশ্বাস জানান, গতকাল বিকাল ৩টার দিকে আমার সমর্থকরা সুজানগর পৌর এলাকার মানিকদিয়ার এলাকায় প্রচারণা চালানোর সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল ওয়াহাবের লোকজন হামলা করে। একই সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন তোফার লোকজনের ওপরও হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ সময় ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয় এ ঘটনায়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নরসিংদী : নরসিংদী সদর ও মনোহরদীতে পৃথক দুই সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটারদের হুমকি, সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা ও বাড়িঘর ভাংচুরের অভিযোগ এনেছেন দলের বিদ্রোহী ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। দলের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী এস এম কাইয়ুম ও বিএনপি মেয়র প্রার্থী মাহামুদুল হক। গতকাল শহরের রাঙ্গামাটি এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর এস এম কাইয়ুমের প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্পে ও বিকালে শহরের ভেলিন্ড রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীরা এসব অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম কাইয়ুম অভিযোগ করে বলেন, আমার এই বিপুল জনসমর্থন বিরোধী প্রার্থীদের বুকে ভীতির কাঁপন সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে মেয়র প্রার্থী কামরুজ্জামান নির্বাচনের পরিবেশ নষ্টের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি শহরের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রচার করছেন, শুধু মামলা দিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের হয়রানি নয়, নির্বাচনে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেবে। জোর করে ভোটারদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেবে। আবারও নরসিংদীতে সন্ত্রাসের সামাজ্য গড়ে তুলবে। মনোহরদী পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সরকারদলীয় প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজনের সমর্থক এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিএনপির কর্মীদের মারধরের ভয়ভীতি প্রদর্শন, অপহরণ ও নারীদের লাঞ্ছনা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।

প্রার্থী ও সমর্থকদের জরিমানা : কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীর তিন কর্মীর ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেলা আক্তার এ আদালত পরিচালনা করেন। কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পৌর এলাকার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আ. হাকিমের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪৮), তেবাড়িয়া গ্রামের সোবাহান শেখের ছেলে উজ্জল শেখ (৩০) ও একই গ্রামের মৃত মনিরুদ্দিন শেখের ছেলে টোকন শেখ (৩৪)।

বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীসহ চার মেয়র ও একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার বিকাল থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রত্যয় হাসান এ জরিমানা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের অফিস সহকারী কায়েম উদ্দিন জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর শাহী সুমনের ৩০ হাজার টাকা, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) আবদুল হামিদ সরদারের পাঁচ হাজার টাকা, আবদুর রশীদ ফারাজীর পাঁচ হাজার টাকা, খন্দকার খোরশেদ আলমের এক হাজার টাকা ও এক নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মিলন মিয়াকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সর্বশেষ খবর