ঢাকার পর এবার জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলেছে গাজীপুর ও চট্টগ্রামে। গাজীপুরে মধ্যরাতে র্যাবের অভিযানের পর সেখান থেকে দুই ‘জঙ্গি’র মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন এক র্যাব সদস্য। এ ছাড়া সেখান থেকে বেশকিছু জিহাদি বইও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে ডিবির অভিযানে উদ্ধার হয়েছে অত্যাধুনিক এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেলসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েক জঙ্গিকে। র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রাতে গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় বাড়ির ভিতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি করে। পরে সেখান থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বাড়ির ভিতর থেকে কয়েকটি অবিস্ফোরিত বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও বেশকিছু জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমানবাজার এলাকায় অপর একটি অভিযান চালানো হয়। এ আস্তানা থেকে বেশকিছু সরকারি গোপন নথিপত্র এবং মার্কিন নৌবাহিনীর ব্যবহূত অত্যাধুনিক এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তিন জঙ্গীকে আটক করা হয়। জানা যায়, হাটহাজারীর জেএমবির আস্তানা থেকে জেএমবির সাংগঠনিক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল, ডায়েরি এবং সরকারি গোপন এবং স্পর্শকতার নথি উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জঙ্গি ছিনতাই ঘটনার পর নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও রয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো ওই স্পর্শকাতর নির্দেশনা শুধু ইউনিট প্রধানের কাছেই সংরক্ষিত থাকার কথা। যা জেএমবির আস্তানা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, শুক্রবার ঢাকার মিরপুরে জেএমবির আস্তানায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। সরকারি গোপন আদেশের নথি এবং মার্কিন নৌবাহিনীর অস্ত্র জঙ্গিদের কাছে কিভাবে পৌঁছল তা নিয়ে বিস্মিত খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সরকারি গোপন নথি এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র জঙ্গিদের হাতে যাওয়াকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম (অব.)। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের কাছ থেকে সরকারি গোপন নথি উদ্ধার এবং আধুনিক অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি অবশ্যই দেশের জন্য হুমকি। সরকারি গোপন নথি কিভাবে জঙ্গিদের কাছে গেল তা তদন্ত করে বের করা উচিত।’
ব্যবসায়ী পরিচয়ে নেওয়া হয় বাড়ি ভাড়া : চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমানবাজারের ইছহাক ম্যানশনের নিচতলার তিনকক্ষের বাসাটি সাত মাস আগে ভাড়া নেয় জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান ফারদিন ওরফে পিয়াস। নাফিজ নাম দিয়ে নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেয়। ঢাকা-চট্টগ্রামে তার ব্যবসা রয়েছে বলেও তখন ফারদিন বাড়ি মালিককে জানান। বাড়ির মালিক হাজী ইছহাক বলেন, ‘নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাড়ি ভাড়া নেয় হাফিজ। দেড় বছরের একটা বাচ্চা ও স্ত্রী নিয়ে বাসায় ওঠে। তবে মাস দুয়েক আগে স্ত্রী-সন্তানকে বাসা থেকে নিয়ে যায়। এরপর মাঝে মধ্যে সে বাসায় আসত। কয়েক দিন আগেও সে বাসা ভাড়া দিয়ে যায়।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইছহাক ম্যানশনের এক ভাড়াটিয়া বলেন, ‘নাফিজ কারও সঙ্গেই খুব একটা কথা বলত না। তার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সব সময় বাসায় থাকত। তবে মাঝে মাঝে দরজায় দাঁড়িয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলত। নাফিজের বউকে সবাই নুসাইবার মা বলে ডাকত।