মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চিন্তা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নিয়ে

গোলযোগের শঙ্কা ৭০ পৌরসভার ৮০০ কেন্দ্রে

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিন্তা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নিয়ে

পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মোট কেন্দ্রের তিন ভাগের এক ভাগকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যস্ত থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জন্য নতুন চিন্তা হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রার্থীদের সংঘাতপূর্ণ মুখোমুখি অবস্থান। কমপক্ষে ৭০টি পৌরসভায় প্রায় ৮০০ কেন্দ্রে সমর্থকদের মধ্যে গোলযোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে মেয়র পদে থাকা দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিমুখী-ত্রিমুখী সংঘাত হয়েছে। আবার কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠনগুলো ও এর বিভিন্ন গ্রুপ আছে বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থায়। তুচ্ছ কারণেও ভোট গ্রহণের দিন হয়ে যেতে পারে সংঘর্ষ। বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে ভোট কেন্দ্র দখলের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। দুশ্চিন্তা আছে উত্তরাঞ্চলের জঙ্গি তত্পরতা নিয়েও। জানা     যায়, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় একাধিকবার সংঘাত ও সংঘর্ষ হয়েছে। এসব এলাকায় ভোট গ্রহণের দিনও সংঘাতের আশঙ্কা আছে। এর মধ্যে রয়েছে কুমিল্লার লাকসাম, চান্দিনা ও দাউদকান্দি; চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড; নোয়াখালীর হাতিয়া; বরগুনার বেতাগী; ভোলার দৌলতখান; পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও কুয়াকাটা; বরিশালের বাকেরগঞ্জ; ময়মনসিংহের ত্রিশাল, নান্দাইল ও গফরগাঁও; জামালপুরের সরিষাবাড়ী ও দেওয়ানগঞ্জ; সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, শাহজাদপুর ও কাজীপুর; যশোরের কেশবপুর, নওয়াপাড়া ও চৌগাছা; শরীয়তপুরের নড়িয়া; লক্ষ্মীপুরের রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ; কুষ্টিয়ার ভেড়ামাড়া, কুমারখালী ও খোকসা; মেহেরপুরের গাংনী; নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও তারাব; পাবনার সুজানগর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও ইশ্বরদী; রাজশাহীর কাটাখালী, আড়ানি, তানোর ও বাঘা; চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ; নাটোরের সদর, গুরুদাসপুর ও গোপালপুর; কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, হোসেনপুর ও বাজিতপুর; ঝিনাইদহের শৈলকুপা; ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও নগরকান্দা; চাঁদপুরের কচুয়া, মতলব ও হাজীগঞ্জ; ঢাকার সাভার; মানিকগঞ্জ; নরসিংদী; টাঙ্গাইল; নীলফামারীর জলঢাকা; মাদারীপুরের কালকিনি; খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা; ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ; নেত্রকোনা ও দিনাজপুরের বিরামপুর। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে, ভোটের দিন পাঁচ কারণে গোলযোগের শঙ্কার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে কমিশনে। এতে মোট ৩ হাজার ৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ভোট কেন্দ্রের ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র খুলনায়। এ বিভাগের ৪৭১ কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া রংপুর বিভাগে ৩০৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি, বরিশাল বিভাগে ১৬৭ কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮০ কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি, ঢাকা বিভাগে ৯৯১ কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৮০১ কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৬টি এবং সিলেট বিভাগে ১৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিশনে জমা হওয়া আরেকটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, নির্বাচনী এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ২ হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসী-ক্যাডার।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র : বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুসারে— বরগুনার ২৭ কেন্দ্রের সব কটি, পাবনার ১০৭টির সব কটি, বাগেরহাটের ২৪টির মধ্যে ২৩টি, সিরাজগঞ্জের ১৩৬টির মধ্যে ৪৯টি, জামালপুরের ৯৯টির মধ্যে ৯৬টি, গাইবান্ধার ৫২টির মধ্যে ৪৭টি, নাটোরের ৭১টির ৪০টি, কুমিল্লার ৮৫টির মধ্যে ৬৬টি, লালমনিরহাটের ২৭টির মধ্যে ১৫টি, জয়পুরহাটের ৩৮টির মধ্যে ২৮টি, রাজশাহীর ১৩৮টির মধ্যে ৩৯টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮৯টির মধ্যে ২৪টি, চুয়াডাঙ্গার ৭২টির মধ্যে ৪৭টি, দিনাজপুরের ৯৩টির ৭৪টি, নীলফামারীর ৪২টির মধ্যে ২৭টি, ময়মনসিংহের ৯৬টির মধ্যে ৬৪টি, লক্ষ্মীপুরের ৩৯টির ২৬টি, মৌলভীবাজারের ৪১টির মধ্যে ২৮টি, নওগাঁর ৪৯টির ৩৯টি, বগুড়ার ১৭৩টির মধ্যে ৭৫টি, যশোরের ১২৬টির মধ্যে ৮৬টি ও পটুয়াখালীর ৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

বাড়তি নিরাপত্তা : নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর বসানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে— নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করতেও বলা হয়েছে। ইসি কর্মকর্তা বলছেন, অপরাধীরা যাতে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোটের দিন এসব কেন্দ্রে ২০ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে থাকবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর