মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে থাকব : খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে থাকব : খালেদা জিয়া

গুলশান কার্যালয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পৌর নির্বাচনে সরকারি দলের অশুভ প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তি যে কোনো স্বৈরশাসকের অসৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ জন্য শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবিচল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গতকাল বিকালে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য সর্বস্তরের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।  সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ (অব.), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, মাহবুবউদ্দিন খোকন, বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ। এ ছাড়া ২০ দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন— জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মোতুর্জা, মুসলিম লীগের এম এইচ এম কামরুজ্জামান, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, জমিয়তে ওলামার মহিউদ্দিন একরাম, খেলাফতে মজলিসের মজিবুর রহমান পাটোয়ারী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ। বিএনপি চেয়ারপারসন পৌর মেয়র নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, দলীয় ভিত্তিতে পৌর মেয়র নির্বাচন করার ব্যবস্থা সরকার করেছে সংকট থেকে উত্তরণের দুরাশা নিয়ে। তারা এই নির্বাচনে সব ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে ফলাফল পাল্টে দিয়ে দেশবাসী এবং পৃথিবীকে দেখাতে চাই, তাদেরও জনপ্রিয়তা আছে। সেই অসৎ উদ্দেশ্যেই আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রশাসন ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে তারা নির্বাচনী ফলাফল ছিনতাই করতে চায়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা ন্যক্কারজনকভাবে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সরকারসমর্থক প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে ব্যবহার করেছে। নির্বাচনকে তারা আবারও হুন্ডা-ডাণ্ডা-গুণ্ডার নির্বাচনে পরিণত করেছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার পৌর নির্বাচনেও ভোট চুরির পুনরাবৃত্তির পাঁয়তারা চলছে। সবাই মিলে দলে দলে ব্যাপক সংখ্যায় ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়ে সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদের ভোটের মর্যাদা রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালানোর জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা আপনাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, যারা আপনাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপকৌশলে সরিয়ে দিয়েছে, তাদের ভোট চাইবার কোনো অধিকার নেই।  বেগম জিয়া বলেন, ৩০ ডিসেম্বর দেশে ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করা হবে। এখন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই নির্বাচনটি খুবই তড়িঘড়ি করে ঘোষণা করা হয়েছে। রেওয়াজ থাকা সত্ত্বেও সময় স্বল্পতার অজুহাতে ইলেকশন কমিশন এ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেনি।  খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ব্যাপারেও কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, আসন্ন পৌর নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। বিরোধী দলের অফিস ও প্রার্থীর ওপর হামলা, সমর্থকদের হত্যা, প্রচারণায় বাধা দেওয়া, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গ্রেফতার ও হুমকি চরম আকার ধারণ করেছে। বিরোধী দল সমর্থক ভোটার ও সম্ভাব্য এজেন্টদের  ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। সন্ত্রাসী ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর একশ্রেণির সদস্যকে এই অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে, সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।  ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান করার পর আবারও পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা জানি না, নির্বাচনী দায়িত্বে জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের এত অনীহার কারণ কী? প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার ফলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী দায়িত্বে সেনা মোতায়েন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিএনপি প্রধান অভিযোগ করে বলেন, শাসক দলের মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী আচরণবিধি বেপরোয়াভাবে লঙ্ঘন করে চলছেন। এর কিছু খবর সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত হলেও মামুলি কারণ দর্শানো নোটিস আর লোক দেখানো দুঃখ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন দায় সারছে। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীনদের আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছে নির্বাচন কমিশন। সাংবিধানিক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কমিশন নিজেদের অসহায়ত্ব ও অক্ষমতাই প্রকাশ করেছে।

বেগম জিয়া আরও বলেন, চাপ ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনেক জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি এবং প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ৭ জন মেয়র ও ১৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান অদ্ভুত সরকারের তথাকথিত বিরোধী দলের এক নেতা, যিনি আবার প্রধানমন্ত্রীরও বিশেষ দূত, তিনিও বলেছেন, ভোটের দিন সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে যাবে। আরেক মন্ত্রী বলেছেন, ভোট হওয়ার আগেই নাকি বিএনপির পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এসব কথা থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, পৌর নির্বাচনকে কী ধরনের প্রহসনে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগুচ্ছে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেছি।

বিএনপির প্রধান বলেন, ‘এবারেই প্রথম মেয়র নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনটি পরিপূর্ণভাবে দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে না। কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারছেন না। একটা জগাখিচুড়ি ব্যবস্থায় নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, এর পেছনে সরকারের ঘোর দুরভিসন্ধি রয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বারবার লড়াই-সংগ্রামের পথে অর্জন করেছি গণতন্ত্র। দুর্ভাগ্য জাতির, শহীদের রক্তে অর্জিত সেই গণতন্ত্র বারবার লুণ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদের শাসনকালে দেশে পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করায় জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই জঙ্গিদের দমন না করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে নির্যাতন চালাবার পথ বেছে নিয়েছিল। তিনি বলেন, এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ধরনের বিপদকে সম্মিলিতভাবে এবং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। চার দিকের অশুভ আলামত ও বিপজ্জনক সব হামলার ঘটনার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর