মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সান্ত্বনার জয় বাংলাদেশের

রাশেদুর রহমান কেরালা থেকে

ইশ! মালদ্বীপ ম্যাচের ৮৭ মিনিটে ড্র লেভেল (১-১) হওয়ার পর যদি বাংলাদেশ অলআউট ফুটবল খেলতে গিয়ে পরাজয়ের শিকার না হতো! ভুটানের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ের পর কোচ মারুফুল হক এবং অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের কী এমন আফসোস করে চলছেন মনে মনে! হবে হয়তো। যদিও প্রকাশ্যে কোচ বললেন, এ জটিল হিসাবটা সম্ভব ছিল না। অথচ পরিস্থিতি বলছে এটা খুবই সম্ভব ছিল। গতকাল গ্রুপের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তান ৪-১ গোলে হারিয়েছে মালদ্বীপকে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি বাংলাদেশের। সর্বনাশ তো আগেই হয়ে গেছে টানা দুই ম্যাচ হেরে। সান্ত্বনার জয় নিয়ে ফুটবলাররা দেশে ফিরে আসছেন।

কেরালার লোকজন কথা কম বলতে পছন্দ করে। এমনকি বন্ধুদের আড্ডায়ও তেমন একটা উচ্চবাচ্য হয় না। কোথাও শোরগোল হতে দেখলেই ওরা অবাক হয়ে তাকায়। তবে তাদের যে ভিন্ন রূপও আছে তা জানা গেল। রবিবার তাদের সাধারণ ছুটির দিন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গভীর রাত পর্যন্ত মাইকে চলল উচ্চাঙ্গসংগীত। আর গতকাল দিনদুপুরে সাক্ষাৎ মিলল মাওবাদীদের। বাংলাদেশ ফুটবল দলের হোটেল বিভান্ত তাজ ও কেরালার পুলিশ কমিশনার অফিসের সামনে মালায়ালাম ভাষায় লেখা বিভিন্ন পোস্টার-ফেস্টুন আর লাল পতাকা নিয়ে শখানেক মানুষের জটলা। স্লোগান চলছে। বক্তব্যও দিচ্ছে মাঝে মধ্যে কেউ। তবে জটলার লোকজনের চেয়ে পুলিশের সংখ্যাই বেশি চোখে পড়ল। সময়ের অভাবে মালায়ালাম ভাষার পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হলো না। টিম হোটেলে ফুটবলারদের মনোভাব জানাটা বেশ প্রয়োজন বিদায়ী ম্যাচের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে।

প্রতিপক্ষ ভুটানের মতো দুর্বল দল হলেও মামুনুলদের কাছে ম্যাচের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। অধিনায়ক হিসেবে জীবনের শেষ ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইছিলেন মামুনুল। কোচ হিসেবে মারুফুল হকেরও হয়তো এটাই শেষ ম্যাচ! দুজনের জন্যই ভুটান ম্যাচটা শুভকর হলো। ৩-০ গোলের জয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বাড়ি ফেরার সুযোগ পেল বাংলাদেশ দল! কিন্তু তৃপ্তির এ ঢেঁকুর কি স্বস্তি এনে দেবে বাংলাদেশের ফুটবলে! যেমন পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার সাখাওয়াত হোসেন রনি দুই গোল করলেও বেশ কয়েকটা নিশ্চিত গোলের সুযোগ মিস করলেন। ম্যাচের ৪০ মিনিটে ওয়ান-টু-ওয়ান হয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। ৮৮ মিনিটে জুয়েল রানার অসাধারণ এক মাইনাস থেকেও নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন রনি। এ ছাড়াও হাফ-চান্স ছিল বেশ কয়েকটা। সুযোগ নষ্ট করেছেন তপু এবং জীবনও। মোটামুটি ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশ ৭-০ গোলেও জিততে পারত। বিশেষ করে ম্যাচের ২১ মিনিটেই চিমি দরজির লাল কার্ডে ভুটান ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর! অবশ্য মামুনুলরা গতকাল এর আগেই এগিয়ে যায়। ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই গোল করেন তপু বর্মণ। মামুনুলের কর্নার কিক হেমন্তের হেডের পর চমৎকার এক হেডারে গোল করেন তপু বর্মণ। ২৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন সাখাওয়াত হোসেন রনি। সংবাদ সম্মেলনে এ পেনাল্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন ভুটানের কোচ পেমা দরজি। তার মতে, শ্রীলঙ্কান রেফারি নিবন রোবেশের প্রতিটা সিদ্ধান্তই ছিল ভুটানের বিপক্ষে! পরে অবশ্য রনি আরেকটি গোল করেন। সদ্য পদত্যাগকারী অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেছিলেন, একটা জয়ই পারে বাংলাদেশকে বদলে দিতে। সত্যিই কি তাই! ভুটানের বিপক্ষে জয়টার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব কতটা! এ জয় কি সত্যিই আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারবে বাংলাদেশকে! আসন্ন বঙ্গবন্ধু কাপে কি ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে দলটা! এসব বিস্ময়মাখা প্রশ্নের উত্তর কেবল ভবিষ্যৎই বলে দিতে পারে। তবে কোচ মারুফ অতটা আশাবাদী নন। তার মতে, বাংলাদেশ ফুটবলের স্ট্রাকচারটারই বদল প্রয়োজন। এদিকে ৪-১ গোলে জেতাতে আফগানিস্তান গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর তারা সেমিফাইনাল খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অন্যদিকে ভারত-মালদ্বীপ মুখোমুখি হবে।

বাংলাদেশ : শহিদুল আলম, নাসিরুল ইসলাম নাসির, ইয়াসিন খান, তপু বর্মণ, ওয়ালি ফয়সাল, জামাল ভূইয়া, মামুনুল ইসলাম মামুন, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, মোনায়েম খান রাজু, নবীব নেওয়াজ জীবন ও সাখাওয়াত হোসেন রনি।

ভুটান : হরি গুরঙ, জিগমে শেরিং দরজি, মান বাহাদুর গুরঙ, চিমি দরজি, দিবস সুবা, বিরেন বাসনেট, করুণ গুরঙ, চেনচো গায়েলশান, লুঙটক দাবা, শেরিং ওয়াঙদি ও শেরিং দরজি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর