মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভালুকায় এমপি আমান উল্লাহ পরিবারের শাসনে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিদিন

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত ভালুকা উপজেলায় ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ নিষিদ্ধ  করেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ডা. এম আমান উল্লাহ ও তার ‘নিজস্ব’ লোকেরা। স্থানীয় পাঠকরা দুই দিন ধরে বাংলাদেশ প্রতিদিন না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। স্থানীয় সংবাদপত্র এজেন্ট জানান, ছাত্রলীগের নির্দেশে পত্রিকাটি আসতে দেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিরুদ্ধে এমন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উপজেলা ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে ‘টক অব দ্য ময়মনসিংহ’। তবে বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানা নেই খোদ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদের। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার।

জানা যায়, ২৪ ডিসেম্বর ভালুকা পৌরসভা নির্বাচনের হালচাল সম্পর্কে ‘নৌকার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের এমপি’ শিরোনামে সরেজমিনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনে। এতে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন ডা. এম আমান উল্লাহ ও তার লোকেরা। এর আগেও তার ভাতিজাদের নিয়ে দেশের শীর্ষ এ দৈনিকটিতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, দখলবাজির চিত্র উঠে আসায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল গোটা উপজেলায়। সেই থেকেই বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতি নাখোশ এমপি আমান উল্লাহ। এরপর পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার অবস্থানের খবর ফাঁস করে দেওয়ায় তিনি রুষ্ট। সেদিনই বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন এমপির ভাতিজারা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওইদিনই এমপির ভাতিজা লুৎফেওয়ালী রব্বানী, রওনক শিহাব রব্বানী, রেদোয়ান সারোয়ার রব্বানী, শিপন মাস্টার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে প্রকাশিত এ রিপোর্ট মিথ্যা দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এরপর বাংলাদেশ প্রতিদিনের কয়েকশ’ কপিতে আগুন দেন তারা। এমপির ‘অতিশয় অনুগত’ হিসেবে পরিচিত উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মামুন, সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হক সজীব, উপজেলা কৃষক লীগ সভাপতি হাজী আবদুর রহমানও ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিরুদ্ধে কথিত আন্দোলনে শরিক হন। হঠাত্ কেন বাংলাদেশ প্রতিদিন নিষিদ্ধ— এ বিষয়ে জানতে ভালুকা সংবাদপত্র এজেন্ট বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ছাত্রলীগ বাংলাদেশ প্রতিদিন ভালুকায় আনতে আমাকে নিষেধ করেছে। এমপিকে নিয়ে খবর প্রকাশ করায় তারা এ সিদ্ধান্ত নেন।’ একই বিষয়ে ময়মনসিংহের সালাম বুক সেন্টারের ম্যানেজার আবদুল আজিজ জানান, ‘ভালুকায় না পেয়ে অনেক পাঠক ময়মনসিংহ শহরে এসে বাংলাদেশ প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে তারা বেশ ক্ষুব্ধ।’

জানার জন্য এমপির ভাতিজা রওনক শিহাব রব্বানীর মুঠোফোনে রিং করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। যোগাযোগ করা হলে ভালুকা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মামুন বলেন, ‘আমরা না, স্থানীয় জনসাধারণ ভালুকায় বাংলাদেশ প্রতিদিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।’ তবে নিষিদ্ধের সেই মিছিলে তিনিও ছিলেন বলে স্বীকার করেন। নিষিদ্ধের মিছিলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান তালুকদার জানান, ‘আমরা ঢুকতে দিচ্ছি না, এটা ঠিক না। জনগণ বিক্ষোভ করে এজেন্টকে বলে দিয়েছে প্রতিবাদ না ছাপা পর্যন্ত পত্রিকা আনা যাবে না।’ সংসদ সদস্য ডা. এম আমান উল্লাহর সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর